
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘মব’ সাংবাদিকতার জন্য একটি বড় হুমকি। সরকার, মালিকপক্ষ ও সম্পাদকের বাইরে এমন একটা সামাজিক শক্তি তৈরি হয়েছে, যে শক্তি সাংবাদিকতাকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। গণমাধ্যম সামাজিক শক্তির চাপে রয়েছে। এটা সবার বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
৬ আগস্ট, বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: অভিযোগ নিষ্পত্তি ও স্ব-নিয়ন্ত্রণের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমান এটি সঞ্চালনা করেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সারাবিশ্বেই কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় নতুন সামাজিক শক্তিগুলোর উদ্ভব ঘটে। তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং কখনও কখনও তা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। বাংলাদেশেও তার কিছু প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনায় যে পরিমাণ সহিংসতা হয়, এখানে তা হয়নি।
সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আলী রীয়াজ বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো দলীয়ভাবে বিভক্ত হতে হতে কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! একটি সম্পাদক পরিষদের পাল্টা আরেকটি দাঁড় করানো হয়েছে রাজনীতির জন্য। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এতে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা গত ১৬ বছর নিয়ে কথা বলি। তবে গত ৫৪ বছরে তো একই জিনিস দেখলাম। যা দেখলাম তাতে আমার এটাই ধারণা, সরকার বদলায় আমরাও বদলে যাই, কম-বেশি। আমি ভীত, চিন্তিত। সাংবাদিকরা দৌড়ের ওপরে আছেন। অনেক সাংবাদিক মামলার শিকার, অনেকে দেশ ছেড়েছেন। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেক সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। অথচ এখন বলা হচ্ছে সাংবাদিকতা মুক্ত। বাস্তবতা হলো, পক্ষে গেলে মুক্ত, বিপক্ষে গেলেই মব ভায়োলেন্স। নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ঐকমত্য কমিশনে যে ঐকমত্য দেখানো হচ্ছে, তা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকতার জন্য আইন প্রসঙ্গে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আইন করে কাউকে দায়িত্বশীল করা যায় না। নিজের মধ্যেই এই দায়িত্বশীলতার পরিচয় থাকতে হবে। সাংবাদিকতায় চাপ আসবেই। সরকার কি চাপ ছাড়া থাকবে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশে সাংবাদিকতা আছে কিনা, যেখানে চাপ নেই। চাপ আছে, এই চাপ তৈরি করেছি আমরা নিজেরাই। আমরা রাজনৈতিক কারণে সরকারকে সমর্থন দেওয়া অথবা যদি অন্য ভাষায় বলতে হয়, সুবিধা নেওয়ার জন্য আমরা চাপের শিকার হয়েছি এবং হচ্ছি।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম এখন রোগাক্রান্ত ও অন্তঃসারশূন্য অবস্থায় আছে। একজনের চাকরি চলে গেলে ১০ বছরেও মালিকপক্ষ তাঁর পাওনা পরিশোধ করে না। এ জন্য আলাদা একটা ট্রাইব্যুনাল করা প্রয়োজন। বিএফইউজে-ডিইউজে মাফিয়াতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলগুলো সাংবাদিকদের মাঝ থেকে একেকজনকে প্রেস মিনিস্টার বানায়। গত ১৬ বছর দেখছি গণভবনকেন্দ্রিক তাদের কর্মকাণ্ড। চাকরির নিশ্চয়তা নেই, ভালো বেতন-ভাতা নেই। তাহলে কীভাবে আমরা ভালো সাংবাদিকতা আশা করব। সন্তোষ গুপ্ত, এবিএম মূসা, আতাউস সামাদের মতো সাংবাদিক আমরা তৈরি করতে পারছি না। সামান্য প্লট আর বিদেশ ভ্রমণের লোভে যেন আর সাংবাদিকরা না থাকে। এটা থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে
তিনি বলেন, একানব্বইয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকার তিন মাসে যা করেছিল, বর্তমান সরকার ১২ মাসেও তা করতে পারেনি।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল) ও মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, মাছরাঙা টেলিভিশনের এডিটর-ইন-চিফ রেজওয়ানুল হক রাজা, জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক আসিফ বিন আলী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খান, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কাজী জেসিন প্রমুখ।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]