শিরোনাম
‘একবার যদি বাঙালির রাখাল রাজাকে দেখতে পেতাম’
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫৮
‘একবার যদি বাঙালির রাখাল রাজাকে দেখতে পেতাম’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে মায়েরা রাজা-রানীর গল্প বলে, পরিদের কথা শোনায়। ছোটবেলা মায়ের কাছে রাতে ঘুমোতে গেলে আমার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতো, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতো। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম মায়ের সেইসব গল্প। মা যখন বঙ্গবন্ধুর গল্প বলতো, আমার চোখের সামনে ভাসতো একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের প্রতিচ্ছবি যাকে ঘিরে আছে সাড়ে ৭ কোটি জনতা। সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বিশালদেহী মানুষটি মোটা চশমা পরে আঙুল উঁচিয়ে বজ্রকণ্ঠে হুঁশিয়ার করছেন শাসক গোষ্ঠীকে, ‘আর যদি একটা গুলি চলে আর যদি আমার মানুষকে হত্যা করা হয়’। সে এক অদ্ভুত কল্পনা।


আমাদের বাসায় ছোট থেকেই দেখে এসেছি আমার বড় ভাই (যিনি নিজেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দিক্ষিত), মা, আপু, বাবা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনায় মত্ত হতেনই।


১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু একবার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের ময়মনসিংহের বাসায় গিয়েছিলেন। পাশাপাশি বাসা এবং আত্মীয়তার সুবাদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের বাসায় মা-মামাদের যাতায়াত ছিল অবাধ! বঙ্গবন্ধু যখন সৈয়দ আশরাফ মামাদের বাসায় আসলেন তখন প্রথমবার বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাত পেয়েছিলেন আমার মা। সে সময় বঙ্গবন্ধু তার মাথায় হাত রেখে আদর করেছিলেন।


এ ঘটনাটি আমি অনেকবার মায়ের মুখে শুনেছি। কিন্তু যতবারই শুনি আগের চেয়ে বেশি শিহরিত হই প্রত্যেকবারই মনে হয় নতুন করে শুনছি। আমি আবেগ ধরে রাখতে পারি না। মায়ের মুখের দিকে তাকাই। মায়ের মাথায় বঙ্গবন্ধুর পরম পিতৃস্নেহের হাতটা যেন আমি অনুভব করি! আমার আফসোস হতে থাকে, একবার যদি আমিও বাঙালির রাখাল রাজাকে দেখতে পেতাম। যদি একবার সে আমার মাথায় হাত রাখতো!


আমার বয়স পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ। ১৫ আগস্টের সকাল। টিভিতে চলছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। অতঃপর সেই কালরাতের ঘটনার বর্ণনা! আমার খুব মনে পড়ে, আমাকে কেমন যেন একটা মন খারাপের বলয় ঘিরে ধরেছিল সে সকালে। মনে হচ্ছিলো আমার মাথার উপর একটা ছায়া থাকার কথা ছিল যা আজ নাই! আমি প্রতিবাদ করতে চাচ্ছিলাম, আমি বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছিলাম...আমার দ্বারা কোনোভাবেই এটা সম্ভব ছিল না। আমি ড্রয়ার খুলে কালো একটা জামা বের করে পরলাম। নিজে কাগজ কেটে কালো ব্যাজ বানিয়ে তা সেঁটে নিলাম গায়ে। পাঁচ কি সাড়ে পাঁচ বছরের বাচ্চার প্রতিবাদ, ক্ষোভ। ওটাই ছিল প্রথমবার আমার উপলব্ধি ।তবে জাতির পিতা, নির্ভিক মহৎপ্রাণের মৃত্যু আমি আজও মেনে নিতে পারি না।


এখন আমি অবাক হই না। যখন দেখি আমার ভাতিজা ওয়াসিউ এখন বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখলেই আনন্দে বলতে থাকে, ‘রুপ্পি এই যে বঙ্গবন্ধু। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ছবি দেখলে কেন যেন সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। আমার ঘরে শেখ রাসেলের একটা ছোট পেইন্টিং আছে, ওদিক তাকিয়ে ও প্রায়ই বলে ‘এই যে বঙ্গবন্ধুর ছেলে’।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম মুজিব, ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল, নববধূ সুলতানা রোজীসহ সবাইকে হত্যা করেছে, তারা হয়তো কল্পনাও করে নাই এত বছর পর এসেও আবার কোনো শিশু তার মনে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের জন্য ভালোবাসা নিয়ে বড় হতে থাকবে।


বাংলাদেশ যতদিন আছে, এদেশের মানুষ, এদেশের মাটি সাক্ষী হয়ে থাকবে এই ত্যাগী পরিবারের, দেশের জন্য সর্বত্র ত্যাগের।


১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সেই ভয়াল কালরাতে নিহত সকল শহীদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু



রুশি চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেয়া।



বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com