রবির সাথে ছবি-ছন্দ মিলিয়েই তারা নিজেকে ভাবছেন বিশাল কবি। ডিএসএলআর হাতে নিয়েই নিজেকে ভাবছেন সেরা ফটোগ্রাফার। ফেসবুক কিংবা অনলাইনে দুই লাইন লিখেই একেকজন সাংবাদিক। আর টিভিতে একদিন পিটিসি দিলে তো সেলেব্রেটি। বইমেলায় একটা বই বের হলেই এরা জনপ্রিয় লেখক।
কথাগুলো বলার কারণ, সারাজীবন জেনেছি যার যতো জ্ঞান তিনি ততোটাই বিনয়ী। কিন্তু আজকাল দেখি উল্টো। বাস্তব জীবন কিংবা ফেসবুক সর্বত্র দেখি নিজেকে জাহিরে ব্যস্ত সবাই। নিজেকে প্রডাক্টের মতো সেল করার এই প্রবণতা ভয়াবহ রকমের অরুচিকর ঠেকে আমার কাছে।
সেই প্রবণতায় পড়ে আজকাল মোবাইল বা পিসি অন-অফ করতে পারলেই অনেকে হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। কোনো নেতার সাথে একটা সেলফি থাকলেই তিনি রাজনীতিবাদ। টেলিভিশন টক শো কিংবা প্রেসক্লাবের সামনে লেকচার দিয়েই কেউ কেউ আবার বুদ্ধিজীবী। ফেসবুকে ‘এক ব্যাগ রক্তের দরকার’ স্ট্যাটাস দিয়েই এরা সমাজসেবী। তদবিরের জোরে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েই কাল এরা মহাপণ্ডিত। একটা বিজ্ঞাপন করেই মডেল। একটা নাটক সিনেমা করেই এরা পরদিন টিভিতে এসে বলে, আমরা বেছে বেছে কাজ করি।
জানি না এগুলো শুধু আমার চোখেই ধরা পড়ে, নাকি সবার চোখে। জানি না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজগুলোতে আজকাল জ্ঞানচর্চা কতোটা হয়। তবে এটা জানি, ‘ইউ নো’ বলা ছেলেমেয়েদের সেখানে প্রেজেন্টেশনের নামে নিজেকে উপস্থাপনের ভয়াবহ এক (অ)বিদ্যা নিশ্চয়ই শেখানো হয়। ফলে ভেতরে কিছু থাক বা না থাক, পাওয়ার পয়েন্ট আর অদ্ভুত এক ‘ইংরেজি’ উচ্চারণে এরা হয়ে ওঠে একেকজন মহাজ্ঞানী।
সব দেখেশুনে প্রতিদিন মনে হয় মাটিতে লুকাই আর প্রতিদিনই নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, মানুষ হতে পারলাম কী? কারণ, আমার ক্ষুদ্র শিক্ষা বলে, ভালো মানুষ তো পরের কথা, মানুষ হওয়াটাই বেশ কঠিন। সৃষ্টিকর্তাকে তাই শুধু বলি, হে প্রভু, জ্ঞান দাও, যেন মানুষ হতে পারি আর চারপাশে কিছু মানুষ দেখতে পারি। মানুষের যে বড় অভাব এই সমাজে!
শরীফুল হাসানের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]