শিরোনাম
তাহলে কী হবে এ বাড়িঘর দিয়ে?
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:০৫
তাহলে কী হবে এ বাড়িঘর দিয়ে?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আমার সহকর্মী ও ব্যবসায়ী অংশীদার কিছুদিন হলো বাড়ি দেখে বেড়াচ্ছেন। উদ্দেশ্য - নতুন বাড়ি কেনা। পূর্ব লন্ডনের রম্ফোর্ড এলাকায় একটি বাড়ি তাঁর বেশ পছন্দ হয়ে গেল। বাড়িটিতে একজন বৃদ্ধ লোক থাকেন। এশিয়ান মুসলমান।


চার বেডরুমের বিশাল বাড়ি ; ভিলা টাইপের। বৃদ্ধ একাই থাকেন। পরিবারের অন্যদের কথা উঠতেই জানালেন যে উনি বিপত্নীক। দু' সন্তান আলাদা বাড়ি কিনেছে, নিজ-নিজ পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকে তারা। এদিকে বৃদ্ধ গেইন ট্যাক্স বা গিফট ট্যাক্স দেয়ার বাড়তি চাপ এড়াতে দ্বিতীয় বাড়িও চান না। এদ্দিন বাড়িতে সরকার নিয়োজিত একজন কেয়ারার ওনার দেখভাল করতো। কিন্তু ইদানীং শরীর বাড়াবাড়ি রকমের ভেঙ্গে যাওয়াতে নিয়মিত নার্সিংয়ের প্রয়োজন হয়। কেয়ারারের পক্ষে নার্সিং সম্ভব না, আর তা আইনসিদ্ধও না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জীবনের বাকী ক'টা দিন কেয়ারহোমেই থাকবেন।


বিলেতে অতিবৃদ্ধদের জন্যে আধুনিক কেয়ারহোম থাকে। এ কেয়ারহোমগুলো ঠিক বৃদ্ধাশ্রম না। যে বৃদ্ধরা দৈনন্দিন কাজগুলো করতে পারেন না, তদুপরি যাদের নিয়মিত নার্সিং প্রয়োজন, তারাই কেয়ারহোমে থাকতে পারেন। একটি ক্লিনিকের যাবতীয় সেবা বা পরিচর্যার ব্যবস্থা এসব কেয়ারহোমে থাকে।


প্রবীণ মানুষটির কথা শুনতে-শুনতে ভাবছিলাম, সারা জীবনের সঞ্চয় উপভোগ না করে যিনি এ বাড়ি কিনলেন, উত্তরাধিকারীরা তা তো নিলোই না, নিজেও মৃত্যুকে আলিঙ্গনের প্রস্তুতি নিতে এখন কেয়ারহোমে যাচ্ছেন। তাহলে এ বাড়ি কেনার কী প্রয়োজনই ছিলো!


আমাদের বাসারই অনতিদূরে আমার স্ত্রীর এক আত্মীয়া থাকেন - বৃদ্ধা , রিটায়ার্ড স্কুলশিক্ষিকা। ওনার স্বামী অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এক ছেলে কনসালট্যান্ট ডাক্তার, স্ত্রী-সন্তানসহ বিলেতেই থাকে। আরেক ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, সম্প্রতি বিয়ে করে আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছে। বৃদ্ধার আবার বাড়ি কেনার ভীষণ নেশা। জীবনভর এ নেশায় এমনটাই বুঁদ ছিলেন যে, সারা জীবন সব শখ-আহ্লাদ-সুখ বিসর্জন দিয়ে কেবল বাড়ির পর বাড়ি কিনে গেছেন। দু সন্তান এবং তাদের স্ত্রী আর নাতি-নাতনিরা উৎসবে-পার্বণে বাসায় আসে, তবে তাও বছরে দু একবারের বেশি নয়। এটাই পাশ্চাত্যের স্বাভাবিক চালচিত্র।


বৃদ্ধা আর তার স্বামী, দু'জনই ইদানীং ভয়ানক রকমের একাকীত্বে ভোগেন। দু'জনের শরীরেই বার্ধক্যজনিত রোগ বাসা বেঁধেছে। বৃদ্ধা ও তার স্বামী আগে একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন, একজনের অসুস্থতায় অন্যজন সাহায্য করতে পারতেন। ইদানীং তাও পারেন না।


বিলেত সরকার সামর্থ্যবানদের বিনে পয়সায় কেয়ারার পাওয়ার সুযোগ দেয় না। সামর্থ্যবানদের নিজ খরচে কেয়ারার নিয়োগ দিতে হয়। বৃদ্ধা ও তার স্বামী নিজেদের প্রতিদিনকার পরিচর্যা আর নার্সিংয়ের প্রয়োজনেই এখন কোনো কেয়ারহোমে চলে যেতে চাচ্ছেন। কেয়ারহোমে নার্সিংটা যেমন পাওয়া যায় তেমনি অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাথে গল্পে-আনন্দে সময়টাও কাটানো যায়।


আমার স্ত্রীর আত্মীয়া সেই বৃদ্ধা ছেলেদের ডেকে তার বিলেতের তিন-তিনটে বাড়ি আর ইন্ডিয়ার একটি ফ্ল্যাট তাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে চাইলেন। কিন্তু বিশাল অংকের গেইন ট্যাক্স আর গিফট ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে ছেলেরা তাও নিতে চাইলো না। তারা তাদের মা-কে বলল সমস্ত সম্পত্তি চ্যারেটিতে দান করে দিতে।


অনেক মনোকষ্ট নিয়ে বৃদ্ধা ছেলেদের সম্পত্তি না নেয়ার ব্যাপারটা আমাকে জানাতেই আমি বললাম, আপনারা দু'জন যা আয় করতেন এতে চাইলেই বছরে দু'-তিনবার হলিডেতে যেতে পারতেন। এতোটা কৃপণতা না করে জীবনটাকে আরও বর্ণিল ও আনন্দময় করতে পারতেন। সারা পৃথিবীটা দেখে পৃথিবীতে জন্ম নেয়াটা সার্থক করতে পারতেন। বাংলাদেশে গরীব কিছু ছাত্র বা পরিবারকে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিতে পারতেন। কিন্তু আজ দেখুন নিজের ছেলেরাই আপনাদের যক্ষের ধন নিতে চাইছে না। আপনারাও জীবনের শেষ সময়টা নিজের বাড়িতে না থেকে কেয়ারহোমে কাটাতে চাইছেন। আপনাদের সন্তানেরা সুশিক্ষিত। শুধু তাই না, আপনাদের প্রতি তাদের দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনেও কোনো অবহেলা নেই। কিন্তু বাস্তবতা তো ওদেরকে দৈনন্দিন কাজ ফেলে আপনাদের সেবায় সারাক্ষণ নিয়োজিত থাকতে সাহায্য করে না। আপনাদের এখন সারাক্ষণের সেবা প্রয়োজন। এটাই অদৃষ্ট, এটাই আপনাদের গন্তব্য ছিলো।


মাঝে মাঝে ভাবি, বৃদ্ধ বয়সে নিজের পরিচর্যা বা সেবার জন্যে যদি কেয়ারহোমেই যেতে হয় , তাহলে অযথা এতসব বাড়িঘর বানানোর প্রয়োজন কি?


দেবাশিস দাসের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com