শিরোনাম
একটি প্রধান কণ্ঠের হারিয়ে যাওয়া
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩৮
একটি প্রধান কণ্ঠের হারিয়ে যাওয়া
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু মানে এ পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রধান কণ্ঠের শেষ হয়ে যাওয়া। আমার বয়স আর দেড় বছরের মধ্যে সত্তর হবে। আমার বয়স যখন তেরো, তখন প্রথম কাস্ত্রোর নাম শুনেছিলাম। সেই নামের সাথেই জড়িয়ে গিয়েছিল তার ভাই রাউল কাস্ত্রোর নাম। তেমনই ছিল এরনেস্তো চে গুয়েভারার নাম। সেই সময় থেকেই আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার নিপীড়িত, অবদমিত মানুষের লড়াইয়ের এক প্রধান সমর্থক হিসেবে ফিদেল কাস্ত্রোর নাম অবিসংবাদিতভাবে ছড়িয়ে পড়ে।


আমাদের দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি তার কথা বেশি বললেও ফিদেল কাস্ত্রো শুধুমাত্র কমিউনিস্টদের বন্ধু ছিলেন বলাটা ঠিক হবে না; তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, উদার সমাজতন্ত্রী এক চিন্তাবিদ ও নেতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পিএলও প্যালেস্টাইন মুক্তি সংগঠনের নেতা ইয়াসির আরাফাতের বিশিষ্ট বন্ধু ছিলেন। যখনই ভারতের প্রয়োজন হয়েছে ফিদেল তখনই হাজির থেকেছেন। ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন তিনি।


কাস্ত্রোর এক বিশিষ্ট বন্ধু ছিলেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, কলম্বিয়ার কাহিনিকার যিনি নোবেল পুরস্কার পান। এক সময় মার্কেস ছিলেন কিউবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা লাপ্রেন্সার ইউরোপীয় সংবাদদাতা। বলাবাহুল্য, নানা সময়ে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসের দেখা হয়েছে এবং সাহিত্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কেস কিন্তু লাপ্রেন্সার কাজটি ছেড়ে দেন। কতগুলো বিষয়ে ফিদেল কাস্ত্রোর নীতিতে ঔদার্য ও সঙ্গতির অভাব দেখতে পেয়ে তিনি কাজটা ছেড়ে দেন। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল।


ফিদেল কাস্ত্রোর এক বিশেষ পরিচিতি অনেকরই অজানা। তিনি ছিলেন এক নিরবচ্ছিন্ন বিরামহীন পাঠক। কখনও তাকে হাতে বই ছাড়া দেখা যায়নি। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলে সব সময় তাঁর প্রথম প্রশ্ন হত, কি পড়ছ এখন? তিনি যেখানেই যান, যাই করুন, হাতে সব সময়ই বই। এই বইয়ের বেশিরভাগটাই ছিল কাহিনি, উপন্যাস, গল্প ইত্যাদি।


ফিদেল কাস্ত্রো সম্পর্কে মার্কিন সরকারের প্রধান অভিযোগ বরাবর ছিল যে, তাঁর নেতৃত্বে কিউবা বিপ্লব রপ্তানি করছে। কথাটা সত্যি হলে, ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভাল লাগত। কিন্তু তা সত্যি ছিল না। এটা অনেক বেশি সত্যি ছিল: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপ্লবী অ্যাকটিভিস্টরা নিজেদের দেশে বিপন্নবোধ করলে কিউবায় আশ্রয় পেতেন।


বিভিন্নক্ষেত্রে কিউবা ফিদেলের নেতৃত্বে অসামান্য সাফল্য পেয়েছে। তার মধ্যে প্রধান জনশিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য। শ্বেতী রোগের সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা কিউবায় হয়ে এসেছে এবং সবচেয়ে কম খরচে। ফিদেলের নেতৃত্বে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দেশে কিউবার ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করেছেন খুবই কম পারিশ্রমিকে।


আজ যদি আমরা পৃথিবীর দিকে তাকাই তা হলে এমন ব্যক্তিত্ব খুব কমই পাব, হয়তো আর পাবই না। যার নাম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংগ্রামী মানুষ এক ডাকে চেনে, এই ব্যক্তিত্বের সারিতে ফিদেল কাস্ত্রো সম্ভবত শেষ নাম অথবা শেষ ক’টি নামের একটি। আমার সমবয়সী যারা, বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, কখনও না কখনও বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন বা এখনও দেখেন তাদের কাছে ফিদেল কাস্ত্রো কিন্তু একটা মেজাজ।


তার তত্ব নিয়ে আমি অন্তত বিশেষ মাথা ঘামাইনি। আমার ভালো লেগেছে হাভানা চুরুট হাতে বা মুখে নিয়ে উদগ্রীব চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা ফিদেল কাস্ত্রোর উজ্জ্বল মুখ। তাকে দেখলে মনে হত এ পৃথিবীর গরীব লোকগুলো এবং অসহায় লোকগুলোর জীবনে কি ঘটছে তাতে তার যায় আসে। এ রকম লোক আমি অন্তত আর দেখতে পাই না কোথাও।


কবীর সুমনের ফেসবুক থেকে...


বিবার্তা/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com