ইদানিং প্রায়ই অনেকে আমাকে বলেন, আরশি আর আগের মতো নাই ডাকলে কাছে আসে না, আদর নেয়না, দৌড়ে পালায়। আমি হেসে বলি, বড় হচ্ছে তো, তাই লজ্জা পায়। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি ভুল বলি...আসল কথাটা হলো, আরশি কে “গুড টাচ্- ব্যাড টাচ্ " শিখানো হয়েছে, যেমনটা ওর বড় বোনকে ওর বয়সে শেখানো হয়েছিলো। ওকে শেখানো হয়েছে - তোমার বাবা ছাড়া তুমি আর পৃথিবীর কোনো পুরুষের কাছে নিরাপদ না। তাই আর আরশি আগের মতো কারো কাছে আদর নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েনা।
এই বয়সে কন্যা শিশু হওয়ার কারণে আমার মেয়েটা অনেক কিছু জেনে গিয়েছে। ও খুব অবাক হয়ে প্রথমে আমাকে প্রশ্ন করলো " মা, আমাকে ব্যথা দিয়ে কি লাভ মানুষদের!!! বললাম, মাগো, ওরা অসুস্থ, ছোটো বেবিদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। ও বললো, তাহলে তো ওদের ট্রিটমেন্ট দরকার...কাষ্ঠ হেসে বলললাম, ঠিক। একটা ছোট্ট শিশুও বোঝে.... আর আমরা বুঝিনা...পেডোফাইল দিয়ে সমাজ ভরে যাচ্ছে... এরা মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। হয়তো আমারই কোনো আপনজন, আস্থা, ভরসার মানুষ। আমি তার এই বিকৃত রুচির কথা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনা।
ইদানিং বড় বেশি অসহায় মনে হয় নিজেকে। খবরে দেখলাম একবছর দশমাস বয়সী কন্যাশিশুর উপর পৈচাশিক নির্যাতনের খবর। আবার দেখলাম, আট বছর বয়সী শিশুকে নির্যাতন করে মেরেই ফেলেছে পশুরা। তিনদিন পর তার গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছে। একবার ভাবুন তো, এই শিশুটা যদি আমার - আপনার হতো!!!
অফিসে যাওয়া বা বাইরে যাওয়া ছাড়া শেষ কবে বাসায় মাথার চুল আঁচড়িয়েছি মনে পড়েনা, আমার সুন্দর পাগুলো ফেটে চৌচির, আগের মতো পরিপাটি হয়ে থাকি না... মনে কোনো খেদ নাই... পুরোটা সময় বাচ্চাদের যত্ন নেই। ঐ আট বছর বয়সী শিশুর মায়ের কেমন লেগেছিলো..ঐ মা ও নিশ্চয়ই আমার মতো পরম মমতায় তার সন্তানের নরম তুলতুলে গায়ে শীতে লোশন আর গরমে পাউডার লাগিয়ে দিতো। বাচ্চাদের শরীরে একটা মশা কামড় আমার রাগে মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার সমস্ত শরীরে নেমেসিস ভর করে। সারা বাড়ি দৌড়ে সেই মশাকে ধরে পিষে মারি। ঐ মা ও নিশ্চয়ই আমার মতোই এসব করতো। আর এত যত্নের সন্তানকে যখন নির্যাতিত লাশ হতে হয়....এই শোক বইবার শক্তি কেমন করে তার থাকে...!!!
এসব ভাবলে পাগল পাগল লাগে... মনে হয় পৃথিবীতে সুখ শান্তি, নিরাপত্তা বলে কিছু অবশিষ্ট নাই। খালি মনে হয় আমার মেয়ে দুইটার কথা। এত অসহায় কখনো আগে নিজেকে মনে হয়নি। চারপাশে খালি অশুভ, কালো, নোংরা পুরুষরূপী দু'পেয়ে জানোয়াররা ঘুরে বেড়ায়। কি করে আমি তাদের হাত থেকে আমার সন্তানদের রক্ষা করবো... তাদের কেউ হয়তো আমার পিতা, স্বামী, পুত্র, ভাই, বন্ধু, প্রতিবেশী.... মাথায় সত্যিই কিছু ধরে না আর। "
ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়, মুখ ঢাকা মুখোশের এই দুনিয়ায় মানুষকে কি করে চিনবে বলো...!!!" কি করে চিনবো তাদের আমি। তার চেয়ে এই ভালো, আমার সন্তানরা সমাজের এই কদর্য সত্যটা জানুক... ওরা নিজের প্রতিরক্ষা বলয় নিজে তৈরি করুক। আর সবার কাছে পৃথিবীর সকল কন্যা শিশুদের নিরাপদে বেড়ে উঠার জন্য একটা পরিবেশের আকুতি জানাই।
হোসনে আরা ফেরদৌস লোপার ফেইসবুক থেকে নেয়া
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]