শিরোনাম
বিউটি নামের মেয়েটি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০১৮, ১৫:৩৮
বিউটি নামের মেয়েটি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মেয়েটি সেই শিশুবেলা থেকেই সুন্দরীই ছিল। তাই হয়ত বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিল বিউটি। কে জানত, এই "বিউটি''ই কাল হয়ে দেখা দেবে বিউটি নামের ১৬ বছরের মেয়েটির জীবনে!


নরপশুরা তাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে একবার। মেয়েটির পরিবার এ ঘটনায় মামলা করেছিল দুরাচারদের বিরুদ্ধে। এটাও তাঁদের ''অপরাধ''। তাই দু' মাসের মাথায় মেয়েটিকে আবার ধরে নিয়ে যায় বেজন্মারা, আবার ধর্ষণ করে। সবকিছুর পরেও তাকে আর ছেড়ে দেয়নি। প্রাণটাও কেড়ে নিয়েছে দুরাচারের দল!


২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে খবর বেরিয়েছে পত্রিকায়!


এই মেয়ে আর তার পরিবারের হয়ত জানা ছিল না, এদেশে কেউ ধর্ষিত হলে এর দায় ধর্ষিতাকেই নিতে হয়! তার চালচলন, জামা-কাপড় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়!


আর যদি এর জন্য মামলা করতে থানা-পুলিশ, অফিস-আদালত করতে হয়; তাহলে প্রতি পদে পদে ওই ধর্ষিতা মেয়েটিকে ধর্ষিত হতে হয়। ভাবখানা এমন, তুমি তো একবার ধর্ষিত হয়েছই। তোমাকে আরেকবার ধর্ষণ করাই যায়! এ আর এমন কি!


মেয়েটাকে প্রথম বার ধর্ষণ করা হয়েছিল দুই মাস আগে। সঙ্গে সঙ্গেই মামলা করা হয়েছিল। আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে, দুই মাস পার হয়ে যাবার পরও আসামীরা কিভাবে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারছিল?


পত্রিকায় পড়লাম, ধর্ষণকারীরা ওই এলাকায় চেয়ারম্যান-মেম্বারের পুত্র!


তো আর কী! তাদের জন্য তো আবার আইন আলাদা!


বনানীর এক হোটেলে বছরখানেক আগে কয়েক জন ধনীর দুলাল তাদের জন্মদিনে ডেকে নিয়ে যে মেয়েগুলোকে নির্যাতন করেছিল; সেই মেয়েরা এখন কেমন আছে, কারো কি জানা আছে?


আপনাদের জানিয়ে রাখি, মেয়েগুলো কেমন আছে না জানলেও বড়লোকের পুত্রগুলো কিন্তু বেশ আছে!


তনু নামের মেয়েটাকে যে হত্যা করা হয়েছিল মনে আছে? কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল! মেয়েটার মৃত্যুবার্ষিকী এই তো কয়দিন আগেই পার হয়েছে। তনুহত্যার কি বিচার হয়েছে?


হয়নি। হবে কি করে! পশু-পাখিদের জন্য যে আলাদা কোনো আদালত এদেশে নেই! তনুকে তো শিয়াল-কুকুর বনের ভেতর ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে বলেও শুনা গিয়েছে! শেয়াল- কুকুরকে তো আর আইন-আদালতের ভয় দেখিয়ে ফায়দা নেই!


বিউটি নামের মেয়েটার মৃতদেহও আজ এই স্বাধীনতা দিবসে পাওয়া গিয়েছে ধানক্ষেতের পাশে। কে জানে, কাল হয়ত শোনা যাবে, ধানক্ষেতের কোনো কীটপতঙ্গের কামড়ে মেয়েটার মৃত্যু হয়েছে।


কীটপতঙ্গের তো আর বিচার করা যায় না! তাদেরজন্য তো আর আলাদা আইন-আদালত নেই দেশে!!


মাত্র ১৬ বছরের ছোট জীবনে মেয়েটাকে দুই দুই বার ধর্ষিত হতে হয়েছে, সেই সঙ্গে দিতে হয়েছে প্রাণটাও! তাও ভালো, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে এই সমাজ ধর্ষিত হবার জন্য পদে পদে তার দোষই খুঁজে বেড়াত আর বেঁচে থাকলে প্রতিদিন-প্রতিরাত তাকে নিয়ম করে ধর্ষিত হতে হতো সমাজের ''মানুষ''গুলোর কাছে।


বলতেই হচ্ছে, এদেশে এখন আর মানুষ থাকে না; থাকে কিছু নর্দমার কীট! যারা এমনকি ধর্ষণের জন্য মেয়েদের জামা-কাপড়কেই দায়ী করে বেড়ায়!


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com