শিরোনাম
‘জ্ঞানী-গুণীরা কোন সমাজেই সংখ্যায় বেশি জন্মায় না’
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৮, ০১:২৫
‘জ্ঞানী-গুণীরা কোন সমাজেই সংখ্যায় বেশি জন্মায় না’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীতে সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ টি স্বাধীন দেশ রয়েছে। এই এতো গুলো দেশের মাঝে জনসংখ্যা অনুপাতে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। দেশ গুলোর মাঝে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেই দেশ গুলোর জনসংখ্যা ৫ থেকে ১০ লাখ।


আমি এখন যেই দেশে থাকি, সেই দেশের জনসংখ্যা ১২ লাখের মতো। এই দেশে আমাদের মতো চমৎকার আবহাওয়া নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা থাকে হিমাংকের নিচে। এমন প্রতিকূল পরিবেশ হওয়া সত্ত্বেও এই দেশের দুটো বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সেরা ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মাঝে স্থান করে নিয়েছে।


এস্তনিয়া নামের এই দেশটি পৃথিবীর প্রথম ই-কান্ট্রি। অর্থাৎ এই দেশের মানুষ ভোট দেয়া থেকে শুরু করে এমনকি সিগনেচারটা পর্যন্ত ডিজিটালি করে। আপনি এমন কি এই দেশে ই-রেসিডেণ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারবেন বাংলাদেশে বসেই। এই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক একাউণ্ট খুলে বসতে পারবেন বাংলাদেশে বসেই।


এস্তনিয়ান এই মডেল পৃথিবীর অনেক দেশ এখন চেষ্টা করছে চালু করতে। তারা এই দেশটিকে ফলো করে।


পৃথিবীর সব চাইতে বিশুদ্ধ বাতাসের দেশও এটি। সেই সঙ্গে মুক্তমত কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও এই দেশটি পৃথিবী সেরা। আপনি আপনার যে কোন ধরনের মতামত এখানে জানতে পারবেন। এই জন্য কেউ আপনাকে জেলে পুরে দেবে না, কিংবা মারতে আসবে না।


মাত্র ১২ কি ১৩ লাখ জনসংখ্যার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত এই দেশটি সোভিয়ত ইউনিওন থেকে স্বাধীন হয়েছে ১৯৯১ সালে।


অর্থাৎ স্বাধীনতার মাত্র ২৬ বছরের মাথায় এরা এতো সব কিছু অর্জন করে ফেলেছে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ নামক দেশটি স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর সমুদয় সকল খারাপ কিছুর তালিকায় আমরা প্রথম হই! দুর্নীতি, খারাপ পরিবেশ, ক্রাইম রেট এমন সব কিছুর তালিকায় আমাদের স্থান হয় প্রথম দিকে!


আর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আমাদের আদৌ কোন অবস্থান আছে কিনা আমার জানা নেই! পৃথিবী সেরা ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়া যায় না। অথচ দুই চার লাখ জনসংখ্যার আইসল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ১২ লাখ জনসংখ্যার এস্তনিয়ার দুই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়া যায়!


তো আমরা জগতের সমুদয় সকল কিছুতে কেন পিছিয়ে আছি সেটা জানেন তো?


আমি একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান কিংবা এই ধরনের বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয় গুলোর অনেক নামকরা থিয়োরি বা তত্ত্ব গুলো কিন্তু এসেছিলো আমাদের দক্ষিণ এশিয়া কিংবা আরব রাষ্ট্র গুলো চিন্তাবিদদের কাজ থেকেই। তাহলে আমাদের তো জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবার কথা ছিল। কেন এগুলাম না?


কারণ আমাদের সমাজ কখনো জ্ঞানী-গুণীদের মূল্য দিতে শেখেনি। তাই তখনকার সময়ে যখন এই সব জ্ঞানী মানুষগুলো এতো সব চমৎকার তত্ত্ব দিয়েছেন; তখন তাদের আশপাশের মানুষ তাদের সমালোচনা করেছে, তাদের ছোট করার চেষ্টা করেছে, কিংবা তাদের মেরেই ফেলেছে। তাদের দেয়া এই তত্ত্ব তারা ব্যাবহার পর্যন্ত করেনি।


অথচ এই বিজ্ঞানীদের দেয়া তত্ত্বগুলো পশ্চিমা দেশগুলো ব্যাবহার করে নিজেরা উন্নত হয়ে গিয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে গিয়েছে।


এখানেই হচ্ছে মূল পার্থক্য। উন্নত দেশ গুলো জ্ঞান-গুণী মানুষদের সমাদর করতে জানে। যেটা আমরা জানি না। আমরা জানি কিভাবে একটা মানুষকে ক্রমাগত সমালচনা করতে হয়, কিভাবে তাকে ছোট করতে হয়।


আমি দীর্ঘদিন বিদেশে থাকছি। প্রায় বছর ১৩ হতে চলল। বিদেশে থাকা বাঙালিরা এই বিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে। কোন বাঙালি যদি একটু ভালো কিছু করে, কিংবা সমাজে ভালো একটা অবস্থানে থাকে; অন্য বাঙালিরা পারলে তাকে টেনে ধরে নিচে নামায়! আমাদের মন মানসিকতা হচ্ছে- আমরা কারো ভালো দেখতে পারি না। কেউ একজন ভালো কিছু করলে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, তাকে কিভাবে ছোট করা যাবে, সেই চিন্তা করা!


আমি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি। জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছে। এছাড়া আমি নিজেও লেখালেখি করি, সেই সূত্রে উনার মতো মানুষের কাছে যাবার সুযোগ আমার হয়েছে।


এতো চমৎকার একজন মানুষ, যিনি জীবনে কখনো কোনদিন কারো সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলেছেন বলে আমার অন্তত ধারণা নেই। এই দেশের মানুষকে তিনি শিখিয়ে যাচ্ছিলেন কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, কিভাবে দেশ সম্পর্কে ভাবতে হয়; চাইছিলেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা অবস্থায় এসে দাঁড়াক।


এমন একজন মানুষকে এই দেশের কিছু মানুষ অনেক দিন ধরেই ক্রমাগত সমালোচনা করে যাচ্ছিলো আর আজ তো উনাকে মেরে ফেলার জন্য ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। শুনেছি তিনি এই মুহূর্তে শঙ্কামুক্ত আছেন।


তো জাফর ইকবাল স্যারের মতো মানুষ কি এই দেশ চাইলেই সব সময় পেতে পারবে? আর আমরা কিনা এই ধরনের মানুষজনকে নিজ হাতে মেরে ফেলছি!


যেই মানুষটা আজ কিনা মাথায় ছুরির আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে অপারেশন করতে নিয়ে যাবার সময় বলেছেন- "হামলাকারী কেমন আছে ? ওকে যেন কেউ মারধর না করে!" আর আমরা কিনা এই মানুষটাকে মেরে ফেলছি!


জ্ঞানী-গুণী পৃথিবীর কোন সমাজেই সব সময় অনেক সংখ্যায় জন্মায় না। এদের সংখ্যা সকল দেশ এবং সমাজেই কম। যেই সমাজ বা যেই দেশ এদের সম্মান দিতে জেনেছে, এদের কাজকে স্বীকৃতি দিতে জেনেছে, তারা শেষ পর্যন্ত সভ্য এবং উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে।


আর আমাদের স্থান হয়েছে জগতের সব চাইতে পিছিয়ে পরা জাতিগুলোর একটিতে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। যেই দেশের মানুষজন তাদের সম্পদ গুলোকে নিজ হাতে ধ্বংস করে, তাদের এটাই প্রাপ্য।


আমিনুল ইসলামের ফেইসবুক থেকে


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com