শিরোনাম
ফাগুনের প্রথম দিনে সবার কাছে ‘আকুল’ আবেদন
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৪৭
ফাগুনের প্রথম দিনে সবার কাছে ‘আকুল’ আবেদন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ধর্ষণ! নারীর বিরুদ্ধে অন্যতম বর্বর সহিংসতা। ধর্ষণের শিকার হয়ে মরে গেলে এই সমাজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বিচার চাওয়া সহজ হয়। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া নারীর পরিণতি আমরা কতোটা ফলো করি? পূর্ণিমার কেইসটা রাজনৈতিক মোড়কে হলেও মেয়েটি কম লড়াই করেনি! রূপা খুনিদের ফাঁসির রায়ে খুশি হলেও ভাবছি ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির কথা।


ঢাকা মেডিকেলের ওসিসি থেকে রিলিজ হয়েছে। কাল মেয়েটি স্বামী-শ্বাশুড়িসহ আমার কাছে এসেছিল। দেখেই মনটা কেঁদে উঠলো। ভালোভাবেই বুঝলাম, এখন ওর মূল লড়াই শুরু হলো। মামলা চালানো, আসামি শনাক্ত, বিচার প্রক্রিয়ার নানা জটিলতা, এগিয়ে যাওয়া, সমাজ ওকে কিভাবে নিবে, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি ওকে কিভাবে নিচ্ছে সব কিছু মিলিয়ে এলোমেলো একটা মানুষ যখন আমার সামনে এলো, মনে হলো ওকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়াই ভাল হবে। নানা দিকের এই লড়াই ১৮/১৯ বছরের একটি মেয়ের জীবনে যেভাবে নাজিল হয়েছে, ওকে ভাসিয়ে কোন অজানায় নিয়ে যাবে সেই আশংকাও ঘিরে ধরলো।


মেয়েটির সাথে একা অনেকক্ষণ কথা বল্লাম। স্বামী-শ্বাশুড়ি-নানা শ্বশুর ও বাড়িওয়ালার সাথেও কথা হলো। শ্বাশুড়ির মান-সম্মান নিয়ে চিন্তা দেখে রাগ হলেও এটাও এই সমাজের কঠিন বাস্তবতা তা ইগনোর করতে পারলাম না। সবাইকেই বোঝাতে চেষ্টা করলাম, এই ঘটনা যে কারো সাথে ঘটতে পারে। এতে তো মেয়েটির কোন দোষ নেই। ঘটনার সময় মেয়েটিকে রক্ষায় এগিয়ে না এসে প্রতিবেশীরাও অপরাধ করেছে। এখন মেয়েটির উপর ঘটনার দায় চাপিয়ে দিলে সেটিও অপরাধ হবে।


ওদের স্পষ্টই জানালাম, মেয়েটিন পুনর্বাসনে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে একটি সংস্থার কাছ থেকে। ওর পাশে আমরা সবাই আছি। সাময়িক কাজ হলো মনে হচ্ছে। এলোমেলো মানসিক অবস্থা থেকে মেয়েটিরও খুব দ্রুত গুছিয়ে উঠলো যেনো। এরপর মানসুরা আর বাণীর সাথে কথা বলে একবুক আশা আর ভরসা নিয়ে মেয়েটি স্বামীর হাত ধরে চলে গেলো। মেয়েটিরও স্বামীও কথা দিলো, ওর হাতটা ধরে রাখবে। নারী নির্যাতনের ঘটনায় অতীতের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমি ছেলেটির কথা বিশ্বাস করলাম। ওদের পাশে আমরা সবাই আছি জানালাম।


এ পর্যায়ে বাড়ির মালিক আমার পরিচিত ছোট ভাই খবির উদ্দিন ও ওর স্ত্রী নূরজাহান আক্তার আঁখির কথা না বললেই না। ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা, রূপগঞ্জ থানায় নেয়া, মেয়েটির বাবার বাড়ি-শ্বশুরবাড়ি যোগাযোগ, কোর্টসহ সব দৌড়াদৌড়ি ও ব্যয় নির্বাহ করছে। সামান্য আয়ের মানুষ এমন মানবিকতা দেখাতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।


সবশেষে আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে মেয়েটি এবং ওর স্বামীর পাশে থাকার আহ্বান রইলো। ওদের দুজনের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলে ন্যায়বিচারের লড়াইটা ওরা ভালোভাবে লড়তে পারবে, সেইসাথে নতুন জীবনও শুরু করতে পারবে। মেয়েটি দশম ও ছেলেটি একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। ওদের জন্য ফাগুনের প্রথম দিনে সবার কাছে আমার আকুল আবেদন রইলো! ধন্যবাদ


আঙ্গুর নাহার মন্টির ফেসবুক থেকে...


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com