শিরোনাম
দেশ আমাদের, সিদ্ধান্তও আমাদের
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪৮
দেশ আমাদের, সিদ্ধান্তও আমাদের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে পেঁয়াজের কেজি কি এখনো ১০০ টাকা আছে?


একটা দেশের জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো সে দেশের মানুষজন কিভাবে মেটাতে পারছে, তার ওপর।


তো আমাদের দেশের মানুষের গড় আয় ধরে নিলাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর আমি যে দেশে এখন থাকছি সে দেশের মানুষের গড় আয় যে খুব বেশি, তাও কিন্তু না। এদের মাসিক গড় আয় বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।


কিন্তু এখানে পেঁয়াজের কেজি বাংলাদেশে টাকায় ২০-৩০ টাকা, আলুর কেজি ১০-২০ টাকা, গরুর দুধের লিটার ৩০-৫০ টাকা, ১০টা ডিমের প্যাকেটের দাম হবে বাংলাদেশি টাকায় ৭০-৯০ টাকা! অর্থাৎ এসব একদম নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, তার দাম এমনকি বাংলাদেশের চাইতেও কম! অথচ এদের মাসিক গড় আয় বাংলাদেশের চারগুণ!


তাহলে জিনিসপত্রের দাম কেন এতো কম? কারণ, এগুলো খুব সাধারণ জিনিস, যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রয়োজন। যার আয় মাসে পাঁচ লাখ টাকা, তার যেমন প্রয়োজন, আবার যার আয় হয়তো গড় আয়ের চাইতে কম, ধরে নিচ্ছি ৫০ হাজার টাকা, তারও এসব জিনিস প্রয়োজন হয়। এ কারণে এসব দেশে সরকার এ ধরনের জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।


আমি যে দেশে বসবাস করছি সেখানে গত পাঁচ বছরে এ ধরনের খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব-একটা ওঠানামা করেছে, এমনটা আমি দেখিনি। বরং দেখেছি, তারা তাদের আয় অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনতে পারে, ব্যয় করতে পারে।


অথচ আমাদের দেশে গড় আয় এতো কম হবার পরও পেঁয়াজের কেজি গিয়ে ঠেকে ১০০ টাকায়, আলুর কেজিও বাড়ে-কমে, ডিম-দুধের দাম তো বেড়েই চলছে!


সমাজে যাদের আয় বেশি তারা নাহয় দাম বাড়ার পরও এসব কিনতে পারে; কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষরা কি চাইলেই কিনতে পারে? কিংবা নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী পরিমাণমতো?


সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আর তাদের এই রিপোর্ট নিয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, "নো নো নো, অল রাবিশ!"


আমি মানছি, আমাদের সার্বিক অর্থনীতি আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রী অবশ্যই কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। কিন্তু এটাও তো সত্য, দেশে ধনী ও দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান বাড়ছে। একটা শ্রেণী ইচ্ছেমতো মাছ-মাংস কিনে মাসের ৩০ দিন খেতে পারছে, আরেকটা শ্রেণী হয়তো মাসে একদিন সেই খাবার খেতে পারছে কিংবা পারছেই না।


ধরুন, সৌদি আরবকে অনেক ধনী দেশ বলা হয়। কিন্তু দেশটি কি সত্যিকার অর্থে উন্নত? কেন উন্নত নয়? কারণ, সে দেশে যেমন অনেক বড় বড় ধনী আমীর আছে, তেমনি অনেকে আছে যাদের তেমন টাকা-পয়সা নেই। আপনি যখন একটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিচার করবেন, তখন এসব আয় যোগ করে ভাগ করবেন। তো সেই হিসেবে হয়তো সৌদি আরব ধনী দেশ। আমি জাস্ট উদাহরণ দিলাম। যদিও সৌদি আরবের মানুষজন অন্তত তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যগুলো ইচ্ছে অনুযায়ী কিনতে পারে বলেই আমার ধারণা।


আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো হচ্ছে, সেটা ঠিক। কিন্তু সেটা কি আমাদের নিজস্ব কোনো ইন্ডাস্ট্রি কিংবা ইনভেস্টমেন্টের কারণে হচ্ছে? দেশে কি নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে? মানুষজন তাহলে চাকরী পাবে কই থেকে?


যেহেতু অনেক মানুষ বিদেশ যাচ্ছে এবং সেখান থেকে টাকা পাঠাচ্ছে; তাই আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে এবং মনে হচ্ছে, আমরা ধনী হচ্ছি। এই টাকাগুলো আসলে খরচ হচ্ছে কোথায়? যেমন ধরুন আমার যদি এখন অনেক টাকা থাকতো, যেহেতু আমি বিদেশে থাকি, আমি কি দেশে একটা ইন্ডাস্ট্রি করার কথা ভাববো, নাকি একটা বাড়ি করার কথা ভাববো? আমার ধারণা, আমি বাড়িই করতে চাইবো। কারণ, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা ভীষণ ঝামেলার কাজ। নানান অফিসিয়াল ঝামেলা পার হয়ে হয়তো শেষমেশ ব্যবসা শুরু করলেন; এরপর শুরু হবে চাঁদাবাজিসহ নানান উৎপাত। তাই লোকজন বিদেশে টাকা রোজগার করে দেশে শিল্প-বাণিজ্য খাতে ইনভেস্ট করতে চান না।


আপনি সিলেটে যান, দেখতে পাবেন প্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়ে রেখেছে লন্ডন প্রবাসীরা। অথচ বাড়িগুলো ফাঁকা, কেউ থাকে না! এরা কিন্তু চাইলে সেখানে ইন্ডাস্ট্রি করতে পারত, তাতে সেই এলাকার মানুষজনের কর্মসংস্থান হতো।


কিন্তু এখন কি তা হচ্ছে? হচ্ছে না। ঢাকার বাইরে মানুষজন সেই অর্থে কাজ করে না কিংবা কর্মস্থান নেই বললেই চলে। ওসব এলাকায় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে; কর্ম সস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে; যাতে আয়ের ব্যবধানটা আস্তে আস্তে কমে আসে। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যাতে কোনোভাবেই নাগালের বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। নইলে দেখা যাবে সামগ্রিক যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না!


এখন যেহেতু আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি, আমাদের অর্থনীতিও ভালো হচ্ছে, তাই এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। অর্থমন্ত্রীর মতো "নো নো নো, সব রাবিশ" বলে সবকিছুকে উড়িয়ে দেয়া মোটেই কাজের কথা নয়।


কেননা, যত দুঃখ-কষ্টই থাক, যত অভিযোগই থাক, দিনশেষে এটা আমাদেরই দেশ। তাই গবেষণা করে হোক, আর যে কোনোভাবেই হোক, আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কিভাবে সামনের দিকে এগুবো!


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com