শিরোনাম
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কিছু কথা
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:১০
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কিছু কথা
প্রতীকী ছবি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এক ছেলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটা মন্তব্য করেছে। সেখানে সে লিখেছে,আর যাই হোক মাদ্রাসা শিক্ষায় অন্তত প্রশ্ন ফাঁস হয় না।


তো ওই ছেলের মন্তব্য পড়ে একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা লিখেছেন, তুমি শিক্ষা ব্যবস্থার কি বুঝবে! পড়েছ তো মাদ্রাসায়। কিছু জানো নাকি? তোমাদের কি কিছু পড়ানো হয়?


ওই ছেলে এরপর লিখেছে, মাদ্রাসায় পড়েছি বলে আপনি এভাবে আমাকে অপমান করতে পারেন না। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমারও আছে।


তো আমি দেখলাম সেখানে অন্যান্য আরও অনেকেই মাদ্রাসায় পড়া ওই ছেলেটাকে এমনভাবে অপমান করেছে যে ছেলেটা শেষ পর্যন্ত তার নিজের মতামত আর জানায়নি।


মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না। কারণ, এই বিষয়ে আমার ধারনা কম। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা তো আমাদের দেশে চালু আছে। তাহলে যারা সেখান থেকে পড়াশুনা করেছে, তাদেরকে এভাবে অপমান-অপদস্থ করার কি মানে?


আপনাদের যদি মনে হয় সেখানকার পড়াশুনা আধুনিক নয়, সেখানে বিজ্ঞানসম্মত পড়াশুনা হয় না; তাহলে মান উন্নত করুন। কিংবা যদি মনে হয় মান উন্নত করলেও লাভ হবে না, তাহলে এই শিক্ষা ব্যবস্থা রেখেছেন কেন?


যারা এখানে পড়াশুনা করছে, তাদের দোষটা কোথায়? দেশে তো এই শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। তাহলে তাদেরকে কেন প্রতি পদে পদে মাদ্রাসায় পড়েছে বলে ছোট করে দেখা হবে?


আর তাছাড়া মাদ্রাসায় যারা পড়াশুনা করে, তাদের সবাই যে এক রকম তাও তো নয়। আমার পরিচিত অনেকেই আছে যারা অনেক বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক চিন্তাভাবনার অধিকারী। আমার এখানেই বাংলাদেশ থেকে এক ছেলে পড়তে এসছে। সে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছে। ছেলেটা যেমন চমৎকার ইংরেজি বলে, ঠিক তেমনি চিন্তা ভাবনায় আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। এখন এই ছেলেটাকে কি আপনি স্রেফ মাদ্রাসায় পড়েছে বলে ধরে নিবেন - কিছুই জানে না, বুঝে না বা ব্যাক ডেটেড?


আপনাদের যদি মনে হয় মাদ্রাসা লেভেলে পড়াশুনার মান উন্নত করা উচিত, তো সেটা করুন কিংবা অন্য কোনো উপায়ে পুরো সিস্টেমটা এক রকম করে ফেলার চেষ্টা করুন। কিন্তু যারা সেখানে পড়াশুনা করছে, তাদেরকে সমাজে ছোট করে দেখার কোনো মানে হয় না। কারণ, আমাদের সমাজে এই ব্যবস্থা আমরাই প্রচলিত রেখেছি।


এই একই ব্যাপার যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে তাদের জন্যও প্রচলিত আছে। আমাদের ধারনা সেখানে পড়াশুনা হয় না। আমি খেয়াল করে দেখেছি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করে তারা সব সময় একটা হীনমন্যতায় ভুগে। কারণ, তারা জানে সমাজের লোকজন তাদের নিয়ে খুব একটা ভালো ধারনা পোষণ করে না।


চাকরির জন্য আবেদন করলে প্রথমেই বাদ পড়ে যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে এই জন্য। কিংবা ইন্টাররভিউ পর্যন্ত গেলে হতে হয় অপমানিত। প্রথমেই হয়ত জিজ্ঞেস করবে, আপনাদের ওখানে কি ক্লাস হয়? পড়াশুনা হয়?


তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ক্লাস না হয়, ঠিকমতো পড়াশুনা না হয়, তাহলে এই সিস্টেম আপনারা চালু রেখেছেন কেন?


যে ছেলেমেয়েগুলো সেখানে পড়ছে, তাদের দোষটা কোথায়? আপনারা তো এই সিস্টেম চালু রেখেছেন। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তাদের সবাই কি খারাপ? কত ছেলেমেয়ে কতো ভালো কিছু করছে; অথচ এরপরেও শুনতে হয়- ছেলে কিংবা মেয়ে তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছে!


একই সমাজ ব্যবস্থায় থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়লে স্মার্ট, আর বাংলা মাধ্যমে পড়লে মিডিয়াম আর মাদ্রাসায় পড়লে ক্ষেত; অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে হিপহপ স্মার্ট, পাবলিকে পড়লে সংস্কৃতিমনা আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও ক্ষেত! এসব অবাক করা চিন্তা ভাবনা আমরা সমাজে চালু রেখেছি। আপনাদের যদি এসব নানান মাধ্যম নিয়ে সমস্যা থাকে; তো সব মাধ্যমকে এক করে; একটা ইউনিক মাধ্যম চালু করুন। আপনারা এই সব সিস্টেম চালু রাখবেন, আবার ছেলেমেয়েদের এভাবে অপমান করবেন, এটা তো ঠিক না।


এরা সবাই এই সমাজেরই মানুষ। একটা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটা বড় কারণ কিন্তু এটাই। এভাবে যদি ছেলেমেয়েরা শুধু কোন মাধ্যমে পড়েছে তার জন্য বৈষম্যের শিকার হয়; তাহলে সমাজ এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়; যেখান থেকে নানান রকম অপরাধের জন্ম হয়। কারণ, হীনমন্যতা মানুষকে নানান দিকে ধাবিত করে। আর এর জন্য সমাজের সিস্টেমটাই দায়ী।


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com