শিরোনাম
কি চমৎকার হাল দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর!
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩২
কি চমৎকার হাল দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে লাথি মেরেছেন আরেক শিক্ষক; যেই শিক্ষক লাথি মেরেছে, তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও বটে! ওই একই অনুষ্ঠানে আরেক শিক্ষকের নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন এক অধ্যাপক!


আমার মনে আছে, ১২ বছর আগে যখন সুইডেনের লুণ্ড ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করতে গিয়েছিলাম, আমাদের প্রোগ্রাম হেড প্রথম দিনেই বলেছিলেন, `তোমারা তোমাদের পুরো মাস্টার্স প্রোগ্রামে ইচ্ছে মতো বিতর্কে লিপ্ত হবে; ইচ্ছে মতো তর্ক করবে; তবে সেটা যেন গঠন মূলক হয়।’


ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যখন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গেলাম, সেখানকার প্রফেসর বললেন, ‘আমার কোনো কথা তোমরা এক বাক্যে মেনে নিবে না। সব কিছুতেই প্রশ্ন করার চেষ্টা করবে। তর্ক করবে, আরগুমেন্টে যাবে; নইলে তো কিছু শিখতে পারবে না।’


আমার পিএইচডির সুপারভাইজার আমাকে সব সময় বলতেন, ‘তুমি যদি বইয়ের সব লেখা কিংবা আমার মতামত মেনে নেও, তাহলে তুমি এগুতে পারবে না। বরং তাদের সমালোচনা করতে শিখবে, তবে সেটা যেন গঠনমূলক হয়।’


আমি এখন যখন এখানে পৃথিবীর নানান দেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াই, কোর্সের শুরুতেই বলি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ধাপ পেরিয়ে যে আমরা আজ এই অবস্থায় এসছি; এই যে মাইনাস ২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় হিটারের তাপে আরামে ক্লাস করছি, কিংবা বৈদ্যুতিক নানান সুবিধা পাচ্ছি; এই সব আবিষ্কার কখনোই হতো না, যদি না ওই আবিস্কারকরা তখনকার সমাজের সব কিছু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন। যেহেতু তারা ওই অবস্থাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তাই তারা প্রশ্ন করেছেন, সেই সব প্রশ্নের উত্তর বের করতে গিয়ে তারা নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করেছেন। তাই ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আমি যা পড়াচ্ছি, তোমরা এক বাক্যে সেটা মেনে নিবে না, তর্ক করবে- বিতর্ক করবে, আর এই সব তর্ক-বিতর্ক থেকেই নতুন নতুন বিষয় বের হয়ে আসবে!


জগতের বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা এই ধরনের উপদেশ দিয়ে থাকেন। সেই সাথে তারা যেই উপদেশ'টা দেন সেটা হচ্ছে, তর্ক-বিতর্ক করবে একজন আরেকজনের সঙ্গে; ইচ্ছে মতো আর্গুমেন্টে যাবে, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই যেন ব্যক্তিগত ক্ষোভে পরিণত না হয়। সব সময়ই যেন গঠনমূলক হয়ে থাকে তোমাদের আলোচনা।


এইসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী এবং শিক্ষকরা নিয়মিত তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হন গঠনমূলক ভাবে, কিন্তু তাই বলে কোনো দিনও একজন আরেকজনের শত্রুতে পরিণত হন না। আর শারীরিক আঘাত! সেতো চিন্তারও অতীত!


আর আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা! এরা ছাত্র-ছাত্রীদের কী শিক্ষা দিবে! এরা তো নিজেরাই একজন আরেকজনকে মারছে, নাক ভেঙ্গে দিচ্ছে! সত্যি বলতে কি, এদের ছাত্র-ছাত্রীরাও আসলে এইসবই শিখছে!


চিন্তা করে দেখুন অবস্থা! যেই প্রক্টরের কাজ হচ্ছে সব রকম ঝামেলা বা এই ধরনের অবস্তার সৃষ্টি হলে সেটা থামানো, তিনি নিজেই আরেক শিক্ষককে লাথি মেরে বসেছেন! এরপরও এরা দাবি করে, এরাই হচ্ছে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়!


কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ছাত্ররা নাকি নিজেরা নিজেরা মারামারি করেছে! তো করবে না কেন? শিক্ষকদের কাজ হচ্ছে শিক্ষা দেয়া। এদের শিক্ষকরা তো মারামারিই শিক্ষা দিচ্ছে! আহা, কি চমৎকার হাল আমাদের দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর!


জ্ঞান-বিজ্ঞান এগিয়েছে প্রশ্ন করার মাধ্যমে, তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে, মারামারির মাধ্যমে নয়। আর আমাদের দেশে যারা জ্ঞান দান করবেন, তারা নিজেরাই মারামারি করেন নিয়ম করে! এরা কি করে নতুন নতুন সব জ্ঞান আবিষ্কার করবে! এরা বড় জোর মারামারির (এই যেমন নাক ফাটিয়ে দেয়ার) নতুন কিছু টেকনিক আবিষ্কার করতে পারবে হয়তো!


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com