শিরোনাম
শিশুর কান্না ও মায়ের উপলব্ধি
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:২৪
শিশুর কান্না ও মায়ের উপলব্ধি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গুলশান আড়ংয়ে গিয়েছি একসাথে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবো বলে। সাথে সাড়ে চার মাসের মেয়ে। ঘন্টাখানেক পর মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করলো খাওয়ার জন্য। সেলসগার্ল এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, ব্রেস্টফিড করার জন্য কোনো জায়গা আছে কিনা? তিনি বললেন, সংলগ্ন 'গ্রাসরুট' নামক ক্যাফেটেরিয়াতে যেতে। সেখানে গিয়ে দেখি সবগুলো চেয়ার-টেবিলই বুক এবং একদমই ওপেন স্পেস যেখানে আসলে একটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো পরিবেশ নেই।


ক্যাফে থেকে বের হয়ে মেয়েটিকে সেটি জানাতেই সে অপারগতা প্রকাশ করলো। বাচ্চা আমার খিদেয় চিৎকার করে কাঁদছে, ঠিক তখনই আরেকটি মেয়ে এগিয়ে এসে বললো 'এক্সক্লুসিভ শাড়ি/জামার ট্রায়াল রুমে ম্যামকে একটু যেতে দাও, টুল আছে এবং ওখানে কাস্টমারও কম।' অপারগতা প্রকাশ করা মেয়েটি অনিচ্ছা নিয়ে বলল 'ম্যাম, দেখবেন ট্রায়াল রুম যেন নষ্ট না হয়, বাচ্চা যেন বমি করে ভরিয়ে না ফেলে।'


খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম যে, বাচ্চার বমির সমস্যা নেই। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যখনই ট্রায়াল রুমে ঢুকছিলাম, কোত্থেকে যেন দ্রুতগতিতে আরেকটি মেয়ে যার পরনে কিনা সেলসগার্লদের পোশাক ছিল না, সাধারণ জামা পরা সে দৌড়ে এসে বলল 'এখানে তো খাওয়াতে পারবেন না, এটা এক্সক্লুসিভ কাপড়ের জন্য। 'গ্রাসরুট' ক্যাফের ভেতরে কর্ণারে একটি জায়গা আছে, আসুন, আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি, কিছুক্ষণ আগে আরেকজন বাচ্চাকে খাইয়ে গেছেন।'


আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এই ভেবে যে তাদের অনিচ্ছেয় এক্সক্লুসিভ ট্রায়াল রুম বাধ্য হয়ে আমাকে ব্যবহার করতে হচ্ছে না এবং খুশি মনে তার পিছু ধরলাম। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যখন দেখলাম রেস্টুরেন্টের টয়লেটে নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বলল 'এখানে খাওয়াতে পারেন আপনি'। তাৎক্ষনিক কথা হারিয়ে ফেললাম আমি। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথার লোক হিসেবে সুবিদিত আমার হাজব্যান্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে কেবল একটি শব্দই বললেন 'হোয়াট'!


তা দেখে কিংবা আমার অসহায় চেহারা দেখে কিনা জানি না মেয়েটি বলল 'যান, ট্রায়াল রুমেই খাওয়ান, আপনার বাচ্চা কাঁদছে দেখে দিচ্ছি। তা না হলে আমরা অ্যালাউ করি না। অন্য মায়েরা টয়লেটেই খাওয়ান।'


সাড়ে চার মাসের মেয়ের খিদের কান্নায় আমার মাথায় কেবল একটি জিনিসই ঘুরছে বাচ্চাটাকে কষ্ট পাওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করে শেষ পর্যন্ত 'এক্সক্লুসিভ ট্রায়াল রুমের' মোড়ায় বসে বাচ্চাকে খাওয়ালাম।


বের হয়ে সিভিল ড্রেসের সেই মহিয়সী আপাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম এই ভেবে যে, তিনি যদি দয়া পরবশ হয়ে আমাকে অনুমতি না দিতেন, তবে আমার দুধের বাচ্চাটার কাঁদতে কাঁদতে কি অবস্থা হতো আল্লাহই জানে!


নিজের জামা-জুতা থেকে ঘরের ডেকোরেশান সবকিছুতেই আমার আড়ং নির্ভরতা। বেরিয়ে আসতে আসতে তাই ভাবছিলাম, আমার মতো ক্রেতার জন্য এমন একটি অভিজ্ঞতার ভার বহন কতটা বেদনাদায়ক!


ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আফরিনের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com