শিরোনাম
মফস্বলের নাগর !
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০১৭, ২১:২১
মফস্বলের নাগর !
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দুই অনুজ লিখলেন, ‘যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ৪’ এবং ‘তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যশোরে ওয়ারেন্ট’। এক ডেস্ক থেকে জানতে চাওয়া হলো- হতাহত কী? অপর ডেস্ক থেকে প্রশ্ন- তারেক জিয়া কে?


আমরা যারা মফস্বলে (এখন অনেকে সম্মান দিয়ে বলেন- ডিস্ট্রিক্টে!) কাজ করি তাদের, তাদের এমনই হ্যাপা!


প্রতিবেশী এক জেলায় বিয়ে করার খুব খায়েশ থেকেই সেখানকার একজন সহকর্মীকে অনুরোধ করেছিলাম, একটা ভালো, স্মার্ট, সুন্দরী মেয়ে দেখতে। সহকর্মী আমাকে কিঞ্চিত ভালবাসতেন! কোনো এক বড় অনুষ্ঠানে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম।আগেরদিন সেই সহকর্মীকে সব বলে রাখি।


সকালে স্পটে দেখা সহকর্মীর সঙ্গে; চা টা খাইয়ে নিয়ে গেলেন মঞ্চস্থলে। সেখানে এক তরুণী পাটভাঙা লালপাড় শাড়ি পরে বসেছিলেন। সহকর্মী পরিচয় করে দিলেন এবং কথা বলার সুযোগ দিয়ে বললেন, গল্প করেন- আমি আসছি।


খুব লজ্জা লাগছিল! পরিচয় পর্বে আমার নাম বলতেই বললেন- জানি; উনি আমাকে আপনার বিষয়ে বলেছেন।


তরুণী (না কি যুবা) সদ্য প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বললেন, আপনাকে পছন্দ হয়েছে; কিন্তু শর্ত একটাই- সাংবাদিকতা ছাড়তে হবে!


কী মুশকিল! কাজ না করলে খাবো কী! চলবে কী করে- শুধাই।


জানান, ভালো কোনো চাকরি না হওয়া পর্যন্ত তিনিই সংসারের সব খরচ মেটাবেন।


সাংবাদিকদের উপর তার মেজাজ খারাপের কারণ কী জানতে চাই।


বলেন, সাংবাদিকদের আয়ুষ্কাল খুউব কম। পথেঘাটে অপঘাতে মরে (সেই সময়কালে যশোরে দুজন প্রথিতযশা সাংবাদিকসহ খুলনা বিভাগে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক অবশ্য অপঘাতে মারা যান)।


তার সঙ্গে সেদিনই প্রথম, সেদিনই শেষ সাক্ষাৎ। বিষয়টি সেখানেই ইতি ঘটে।


ভদ্রমহিলা খুব সরলমনে তার হবু স্বামীর অপঘাতে মৃত্যুর আশঙ্কার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি, তাই শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, যারা বিবাহ নামক কারাগারে এখন অন্তরীণ, তাদের কী ভাষ্য?


তাদের ভাষ্য নাইবা বললাম, নিজেদের করুণ অবস্থা প্রকাশ করারও ক্ষেত্র নেই। ঈদের আগে কত সংবাদ লেখা হয়- শিক্ষকদের এবারের ঈদে উচ্ছ্বাস নেই; ... শ্রমিকদের বেতন-বোনাস এখনো আসেনি... ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যারা মফস্বলের নাগর, তাদের কী অবস্থা!


শ’য়ে শ’য়ে মিডিয়া, মফস্বলে সাংবাদিকদের সংখ্যাও তেমন। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক সবমিলিয়ে রয়েছে শতাধিক সংবাদকর্মী। অনেক মিডিয়ার প্রতিনিধি আছেন, তারা বেতন কাকে বলে- তাও ঠিকমত জানেন না; আর বোনাস? সেতো দূর আকাশের তারা!


অনুজ এক সংবাদকর্মী আক্ষেপ করে বলেন, ভাই সংসার চালানো আর হয়ে উঠছে না। এরচে’ বেশ ভালো ইজিবাইকের চালক হওয়া। অন্তত প্রতিদিন নগদ আয়।


স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকাসহ বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেও মাসশেষে হাহাকার।


এই আমাদের সামনে ওয়েজ বোর্ড নামক একটা শব্দ দীর্ঘদিন ঝুলছে। শুনে আসছি, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম... কিন্তু ওয়েজ বোর্ড খায় না মাথায় দেয়- বেতন বোনাসহীন এই সংবাদকর্মীদের কাছে একটা গোলক ধাঁধাঁ!


মফস্বলের সংবাদকর্মীরা কী এমন কাজ করেন?


তা ঠিক- তারা কিছুই করেন না। শুধু এটুকুই বলা যায়, তারাই হচ্ছেন সংবাদপত্র-মিডিয়ার প্রাণ, অলঙ্কার! কোন বিট করতে হয় না তাদের? একজন মফস্বলের নাগর সত্যিকারের মা দুর্গা, দশভূজা। এমন কোনো বিট আছে- যা তাদের কাভার করা লাগে না? তবুও নাক সিঁটকানো স্বভাবটা যায় না ডেস্কের লোকজনের। তাদের দেয়া লাগে ৫০ হাজার থেকে লাখেরও বেশি; আর এই অচ্ছ্যূৎদের জন্যে বরাদ্দ ... যাক নাইবা উচ্চারণ করি!


এতকিছুর পরও কেন লেপটে থাকা? উপায় নেই গোলাম হোসেন! এ যে বিনি সুতোর মালা, এ যে দিল্লি কা লাড্ডু... এ এক নেশা!


তৌহিদ জামানের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com