শিরোনাম
‘জানুক না হয় সবাই’
প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৭, ০২:২৭
‘জানুক না হয় সবাই’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

১৪ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। আজ মনে হলো জানুক না হয় সবাই। কত রক্তের উপর দিয়ে, কত কষ্ট, জেল জুলুমের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আজ। আমাদের প্রাণের নেত্রী, আমাদের আস্থা, ভালোবাসার ঠিকানা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।


২০০৩ সালের ১৬ জুন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস আর পলাশ ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার তখন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। যেহেতু সারা বছর পড়ি না, পরীক্ষার আগের দিন না পড়লে পরীক্ষা দিতে পারি না। ১৬ জুন দিনটা ছিল পরীক্ষার আগের দিন। ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে বিকেলে পলাশ ভাইয়ের নিথর দেহ দেখে যখন ফিরছিলাম মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় আমার মধ্যে নেই। সহকর্মী, সহযোদ্ধাকে হারানো যে কেমন কষ্টকর অনুভূতি, যে হারিয়েছে সেই কেবল বুঝতে পারবে।


২০০১ সালের অক্টোবরের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রত্যেক দিনই আমাদের জেল জুলুম, হুলিয়া, প্রিয়জন হারানোর ব্যথা এগুলো রুটিন হয়ে গিয়েছিল। প্রচন্ড কেঁদেছিলাম, রাতে দুই চোখ বন্ধ করতে পারিনি, পরদিন পরীক্ষা দিলাম।


বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এস আর পলাশ হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করলো- ধর্মঘট, হরতাল। ১৯ জুন অর্ধদিবস হরতাল ডাকলো। এই হরতাল সফল করতে হবে। ওবায়দুল কাদের ভাই তখন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৮ ই জুন, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ৩য় তলায় যেটি নেত্রীর সভাকক্ষ ছিল। তৎকালীন সভাপতি লিয়াকত শিকদার ভাই ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু ভাই এবং কাদের ভাই আমাদের কিছু নির্দেশন দিলেন।


আজ পার্টি ক্ষমতায় মানুষের অভাব নেই কিন্তু তখন আমাদের ভয়ংকর দু:সময় ছিল। মানুষও ছিল হাতেগোনা। ১৯ জুন ২০০৩ আমরা ভোর ছয়টা থেকে মাঠে। ছাত্রলীগের ডাকে হরতাল তাই দায়িত্ব আমাদের বেশি। শাহাবাগে প্রচুর পুলিশ ছিল। আমরা মিছিল শুরু করি। মিছিল থেকে পুলিশ শহীদুল্লাহ হলের মিলন ভাইকে ধরে ফেলে খুব মারছিল। আমি রাস্তার বিপরীত দিক থেকে মিলন ভাইকে দেখে দৌড়ে যাই তাকে বাঁচানোর জন্য। আমি ভেবেছিলাম যেয়ে হয়তো বা আমার ভাইটাকে সেভ করে আনতে পারবো। কিন্তু ওরা মিলন ভাইকে ছেড়ে আমাকে ঘিরে ধরে পেটানো শুরু করে। ব্যথা, কষ্ট আর অপমানে আমি কাঁদতে থাকি। তখন মারুফা আক্তার পপি আপা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। এত টানাহেচড়া হচ্ছিল যে একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে আর পপি আপাকে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।


পরে ইলিয়াস ভাইয়ের মুখে শুনেছি সেদিন পুরা শাহাবাগ প্রত্যক্ষ করেছিল যে, দুটি মেয়ের সাথে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কি নির্মম আচরণ করেছিল। পরের দিন প্রত্যেকটি পত্রিকায় এটি লিড নিউজ ছিল। একদিন পর আমার পরীক্ষা ছিল। আমাদের মত যারা, তারা মেধাবী হতে পারেনি। টকশোতে যেয়ে ভালো ভালো কথা মুখ দিয়ে তাদের হয়তবা আসে না। কারণ এক একটা দিন ছিল তখন অগ্নিঝরা দিন।



আমি পুলিশকে অনুরোধ করে একটা কল করেছিলাম শারমিনকে। আমার পড়ার বইগুলো নিয়ে আসার জন্য। কারণ পরীক্ষা তো দিতে হবে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় খালেদা নিজামী সরকার। আমরা ওইখান থেকেই নেত্রীর সাথে দেখা করতে গেলাম। আমার যেহেতু পরীক্ষা চলছিল সেইজন্য বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগকে এমন কর্মসূচি দিতে হয়েছিল।


আমাদের কর্মীবান্ধব নেত্রী সব সময় আমাদের খবর নিয়েছিলেন ও দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিভাবে আমাদের মুক্ত করা যায়। কাদের ভাইও সার্বক্ষনিক খবর রাখছিলেন। পরে আপার সাথে দেখা হলে বকা খেয়েছিলাম। পরীক্ষা চলছে তোমার, হরতালের মিছিলে কেন গিয়েছিলে? আপাকে দেখেই শান্তি, উনার কথা আমাদের মত কর্মীদের জন্য অমৃত বাণী। হাঁটতে পারছিলাম না। তবে সেদিন আমরা কোন কষ্টকেই কষ্ট মনে করতাম না। ভাই হারানোর বেদনার কাছে সেদিন এই কষ্ট কিছুই ছিল না।


আজকের এই জেনারেশন কি জানে কত রক্ত গঙ্গা, কষ্টের পাহাড় পেরিয়ে আজকের দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কত আপনজনকে আমাদের হারাতে হয়েছে। জেল, জুলুম, নির্যাতন, রাতে বাসায় পর্যন্ত ঘুমাতে পারেনি আমাদের নেতাকর্মীরা। জানি না তাদের খবর আমরা রেখেছি কিনা কিন্তু দেশের প্রয়োজনে ও দলের প্রয়োজনে জীবনকে অনেক আগেই উৎসর্গ করেছিলাম, দরকার হলে নেত্রীর এই কর্মীবাহিনী জীবন দেয়ার জন্য সব সময়ের জন্য প্রস্তুত। কারণ যতদিন আপনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।


অপর্ণা পাল এর ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com