শিরোনাম
অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে মানুষ কার কাছে যাবে?
প্রকাশ : ৩০ মে ২০১৭, ১৬:৩৪
অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে মানুষ কার কাছে যাবে?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কিছুদিন আগে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত একটি হোটেলে পানীয়ের দাম বেশি রাখায় আমাদের এক ভাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্রে অভিযোগ করেছিল। আমরা জানি, অভিযোগ করার পর বাদী ও বিবাদীকে চিঠি দিয়ে শুনানিতে ডাকা হয়। সেখানে বাদী কে, সেটা আগে থেকে বিবাদীর জানার কথা নয়, বিশেষ করে তার বাসার ঠিকানা। কিন্তু এক্ষেত্রে অবাক হয়ে দেখলাম, বিবাদী হোটেল মালিক কী এক ''অলৌকিক'' উপায়ে বাদী অর্থাৎ আমাদের সেই ভাইয়ের বাসার ঠিকানাটি পর্যন্ত সংগ্রহ করে ফেলেছে এবং একের একের পর এক হুমকি দিয়ে বাদীকে নিষেধ করছে যেন শুনানীতে না যায়। এমনকি সেই হোটেল মালিক বাদীর বাসায় মাস্তান পাঠিয়ে বাদীর চাচা-চাচীকে পর্যন্ত শাসিয়েছে। বলেছে, যদি বাদী শুনানিতে অংশ গ্রহণ করে তাহলে তাদের এলাকাছাড়া করা এবং বাদীর হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, বাদী তার সরকারী চাকুরীজীবী চাচার বাসাতেই থাকেন।


তো হোটেল মালিকের হুমকির প্রেক্ষিতে বাদী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্রের অভিযোগ শুনানীকারী কর্মকর্তাকে ফোনে বিস্তারিত ঘটনা জানান এবং স্থানীয় থানায় জিডি করেন।


বাদীর অভিযোগের শুনানীর আগের রাত থেকে তার বাসার সামনে হোটেল মালিকের পোষ্য মাস্তানরা মহড়া দিতে থাকে। বাদী ভয় পেলেও আমরা কয়েকজনের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত শুনানীতে যান। আর সেখানেও তিনি যে ''সম্মান'' পেলেন সেটা সারা জীবন মনে রাখবেন।


আমরা জানি, ভোক্তা অধিকার আইনের ৪০ ধারামতে কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।


কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে আমরা কী দেখলাম? দেখলাম, সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এবং বাদীকে হুমকি দেয়া হচ্ছে তা অবগত থেকেও (বাদীকে ফোনে দেয়া হুমকির রেকর্ড আছে) ওই সরকারী কর্মকর্তা উক্ত হোটেলকে জরিমানা করলেন মাত্র ২০০ টাকা!


এটা কি বাদীর সাথে প্রহসন, না বিবাদীকে ভবিষ্যতে আরো বেশি করে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া - তা আমাদের বোধগম্য নয়।


সমস্যাটি এখানেই মিটে গেলে বাদী হয়তো বেঁচে যেতেন। কিন্তু সমস্যার মাত্র শুরু। এখন বাদী বিকেলে তার অফিস শেষ করে বাসায় যেতে পারছেন না। ইতিমধ্যে হোটেলমালিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাদীর বাসার সামনে ''পাহারা'' বসিয়েছে। এমনকি উনি যে সরকারী কোয়ার্টারে থাকেন সেই কলোনীর সেক্রেটারীর কাছে বিচার দেয়া হয়েছে, বাদী কেন একই এলাকায় বসবাস করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে।


ভয়ে বাদীর অবস্থা যায় যায়। আমাদের পরামর্শে বাদী শেষে জিডির ভিত্তিতে পুলিশের কাছে সহায়তা চায়। পুলিশ এসে তাকে বাসায় দিয়ে গেছে ঠিক, কিন্তু একইসঙ্গে নসিহতও করে গেছে, কেন এলাকায় বসবাস করে এলাকার ''মানুষের'' সাথে ''ঝামেলা'' করেন?


অর্থাৎ পুলিশ বাবাজিও হোটেলমালিকের পক্ষই নিলেন।


প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে মানুষ তাহলে কার কাছে যাবে?


সুশান্ত দাশগুপ্তের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com