শিরোনাম
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত করবই
প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৭, ২২:৪২
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত করবই
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা। কেন সেটা বলার আগে বলি আমি সারাটাজীবন চেষ্টা করেছি নিজে কষ্ট করে হলেও আরেকজনের মুখে হাসি ফুটাতে। আদৌ পেরেছি কী না জানি জানি না, তবে চেষ্টাটা ছাড়িনি। এর আগেও বলেছি সাংবাদিকতা আমার কাছে একটা আমানত। মানুষের দুঃখ কষ্ট তুলে ধরার আমানত। আমি আজীবন সেই আমানত রক্ষার চেষ্টা করেছি।


আমি বিশ্বাস করি একটা দেশের ভবিষ্যত হচ্ছে সেই দেশের তরুণরা। যেহেতু আমি পিএসসি আর চাকুরি বাকুরি নিয়ে নিউজ করি কাজেই তরুণদের কষ্টটা বুঝি। আমি জানি একটা ছেলে বা মেয়ে একটা চাকুরি পেতে কী অসম লড়াই করে। আমি নিজে কখনেো সরকারি চাকুরির লড়াইয়ে নামিনি। কিন্তু প্রতি‌দিন চাকু‌রিপ্রার্থীরা আমার কাছে আসেন। বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি, নানা অনিয়ম, নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা, ভেরিফিকেশন সমস্যাসহ নানা কারণে আপনাদের কষ্টটা আমি বুঝি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিশাপ। এসএসসি,এইচএসসি থেকে শুরু করে ‌নিযোগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন এই রাষ্ট্রের অভিশাপ।


আপনারা জানেন, বিগত ২১ এপ্রিল জনতা ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষা শেষে আপনারা অভিযোগ করলেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আমিও চেষ্টা করলাম একটার পর একটা নিউজ করতে। কিন্তু আপনারা একজনও পরীক্ষার আগে আমাকে পরীক্ষা শুরুর অভিযোগ করেননি। ফলে আমার জন্য লড়াইটা কষ্টের ছিল। আর সে কারণেই এবার অগ্রণী ব্যাংকের আগে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলাম প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ থাকলে আমাকে দয়া করে পরীক্ষার আগে জানাবেন। আর এ কারণেই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা।


বৃহস্পতিবার রাতে আমি আপনাদের মেসেজে ঘুমাতে পারিনি। গতকাল রাত থেকে আজ পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত আপনারা আমাকে অসংখ্য তরুণ ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছেন। এটাই ছিল আমার লড়াইয়ের শক্তি। আপনারা যারা আমাকে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন একজনেরও নাম আমি কোথাও প্রকাশ করিনি। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রথম আলোয় নিউজ করি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ। প্রথম আলোর কাছে প্রশ্নপত্র আছে। পরীক্ষা শেষে সকাল ১১ টায় আবার নিউজ করলাম ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা।


এতোকিছুর পরেও বরাবরের মতোই এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা আমার কাছে জানতে চায়, আমি যদি আগেই প্রশ্নপত্র পাই কেন তাদের জানালাম না। ছেলেমেয়েরাও কেন জানালো না। আমি জবাব দিলাম, ছেলেমেয়রা জানাবে কোথায়? কোন জায়গা রেখছেন। আর সাংবাদিক হিসেবে আমার কাজ সংবাদ করা। পরীক্ষা শুরুর আগেই আমি আমার কাজটা করেছি। আপনারা কেন সেটা দেখলেন না? কেন নিজেরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না? আর পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে কী না সেটা কেন আপনারা তদারকি করছেন না?


ইতিমধ্যেই বিষয়টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোড়ন শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারাও প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায় এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমুর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কাজেই তারাও চান এটা বন্ধ হোক। ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি জানাই বিকেলের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। সব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দুপুর সোয়া একটায় ব্যাংকিং বিভাগ আমাকে জানায় বিকেলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমি যেন সবাইকে জানাই। আমি তখন তখন তাদের বলি সকালের পরীক্ষার কী হবে? সেটারও তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তারা বলে এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি তাদের বলি এই পরীক্ষাও বাতিল হতে হবে। কারণ শতভাগ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।


তবে আমি মনে করি বিকেলে যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করা হলো সেটা আমাদের সাময়িক বিজয়। যে দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল তো দূরের কথা কেউ স্বীকারই করতে চায় না সেখানে এই পরীক্ষা বাতিল আমাদের তো নৈতিক বিজয়ই। আর সে কারণেই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা। কারণ আপনারা পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নপত্র না দিলে এই রাষ্ট্রকে বোঝাতে পারতাম না কি নগ্নভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় দিনের পর দিন।


এখন বলেন আজকের এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখলাম। তার আগে প্রশ্ন করে নেই আপনারা কী চান এভাবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হোক? নিশচয়ই চান না। তাহলে আপনারা কিছু মানুষ কেন প্রশ্ন কেনাবেচা করেন? আপনারা না কিনলে তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ এরপর থেকে যে কোন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পেলে আগেই সেটা জানাবেন। আমাকে জানাতে ইচ্ছে না করলে নিজে ফেসবুকে প্রশ্ন দিয়ে অনলি মি করে রাখবেন যাতে করে রাষ্ট্রকে বলতে পারি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।


সত্যি বলছি দেশটাকে খুব ভালোবাসি বলেই আমি চাই এই রাষ্ট্র থেকে সব ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হোক। আজ সকালেও বলেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্লিজ প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে ক‌ঠোর ব্যবস্থা নিন। এখনো সেই দাবি করছি। জানি না রাষ্ট্র আমার কথা শুনবে কী না। তবে যতোদিন সাংবাদিকতা করবো আমি আমার লড়াইটা করবো। আপানারা অনেকেই আজ আমার প্রশংসা করে বলেছেন, আমি নাকি ওয়ান ম্যান আর্মি। মোটেও তাই নয়। আপনারাই আমার শক্তি। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে এই রাষ্ট্রকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে পারবোই।



শরিফুল হাসানের ফেসবুক থেকে



বিবার্তা/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com