কোন একটা পত্রিকায় পড়লাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের এক ছেলের সার্টিফিকেটে লেখা সে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাশ করেছে!
এই নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ ভুল তো হতেই পারে। দিনশেষে মানুষ'ই এই কাজগুলো করে। তাই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে!
এখন যেই ছেলের সার্টিফিকেটে এই ভুল এসছে, তাকে এটা ঠিক করতে কতো রকম ঝামেলার মাঝ দিয়ে যেতে হবে আমার অন্তত জানা নেই। তবে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে নামের বানান ভুল এসছিলো। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে গিয়ে বললাম, আপনারা নামের বানান ভুল দিয়ে রেখেছেন। এটা ঠিক করে দিতে হবে।উনারা আমাকে জানালেন, আপনাকে টাকা পে করে আবার আবেদন করতে হবে; শুধু তাই না, আবেদনপত্র এমনভাবে লিখতে হবে যেন মন হয় ভুলটা আমার'ই!
তো যেই ভদ্রলোক এই কথা বলছিলেন, তিনি এমন বিরক্তি নিয়ে বলছিলেন- ভাবখানা এমন ভুলটা আমি'ই করেছি! নতুন করে নামের বানান শুদ্ধ করে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে আমাকে বেশ ভুগতে হয়েছিলো। ভুল করলো উনারা, উল্টো টাকা দিতে হলো আমাকে!
অথচ উচিত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিজেরাই ঠিক করে দিবে। তবে বাংলাদেশ বলে কথা! এখানে সব কিছু উল্টো পথে চলবে এটাই স্বাভাবিক!
এক ইংল্যান্ডের শিক্ষক কয়েকদিন আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, আচ্ছা, তোমাদের দেশে কি সব ছাত্র-ছাত্রীরা খুব ভালো ছাত্র, অসাধারণ মেরিট, ভালো চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকে? আমি জানতে চাইলাম, এই প্রশ্ন করছো কেন? বলল, আমি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যত রেকমেন্ডেশন লেটার পেয়েছি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকের কাছ থেকে-তারা সবাই এইসব কথাই লিখেছে! তাই ভাবলাম তোমাকে জিজ্ঞস করি!
আমি তাকে কোনো উত্তর না নিয়ে হালকা হেসেছি। আমার ধারণা, সে নিজেও ব্যাপারটা জানে, জাস্ট বলার জন্য বলেছে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের অনেকেই বোধকরি ঠিক মতো জানেন না, কিভাবে একটা রেকমেন্ডেশন লেটার লিখতে হয়! তবে চার মাসে কিভাবে খাওয়া বাবদ ১২ লাখ টাকা তুলতে হয়, এটা তারা ভালো করেই জানেন!
বাংলাদেশে শিক্ষকদের গিয়ে আপনি জিজ্ঞেস করুন- আপনি এরপর কি হতে চান? অন্য দেশের শিক্ষক হলে বলবে- আমি গবেষণা করতে চাই, কোন একটা কিছু আবিষ্কার করতে চাই কিংবা অন্তত কোনো একটা বিষয়ের উপর এক্সপার্ট হতে চাই।
তবে বাংলাদেশের শিক্ষক বলে কথা! তারা বলবেন, আমি হলের প্রভোস্ট হতে চাই, ডিপার্টমেন্টের হেড হতে চাই কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে চাই! সব কিছু উল্টো হতে হবে এটাই স্বাভাবিক!
এই লেখা লিখতে লিখতে এক ছেলের স্ট্যাটাস নজরে এসছে। কোন এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী জন্মদিন পালন করতে গিয়ে এক হোটেলে গিয়ে ধর্ষিত হয়েছে। এই নিয়ে সে লিখেছে- হোটেলে গেলে ধর্ষিত হবা না তো কি? ওই স্ট্যাটাসে দেখছি অন্যরা কমেন্টে এসে মেয়ে দুটোকেই সব দোষ দিচ্ছে!
অন্য কোনো দেশ হলে যেই ছেলে দুটো ধর্ষণ করেছে তাদের দোষ খোঁজা হতো; তাদের শাস্তির কথা বলো হতো। তবে বাংলাদেশ বলে কথা! উল্টো না হলে আর চলে কি করে! তাই এই দেশে ধর্ষিত হওয়ার পরেও লোকজন যে ধর্ষিত হয়েছে তার দোষ'ই খুঁজে বেড়ায়!
আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]