যেসব নারী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক গাড়িতে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন তাদের কথা ভিন্ন। অফিসের গাড়িতে যাতায়াতের সুযোগ ভোগকারীদের নিরাপত্তা নিয়েও খুব একটা শঙ্কা নেই। কিন্তু শহুরে কর্মজীবী নারীদের একটা বিরাট অংশের যাতায়াত লোকাল বাসে। যারা আমার মতো নিয়মিত লোকাল বাসে চলাফেরা করেন তারা জানেন যে, সিট পাওয়াতো দূরের কথা বাসে ওঠার জন্যই রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়, হতে হয় শক্ত-সমর্থ।
সিট ফাঁকা না থাকলে নারীদের বাসে তুলতেই চান না বাসওয়ালারা। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তিগুলোও অকাট্য! একজন নারী যে জায়গা নিয়ে দাঁড়াবে সেই একই জায়গায় তিনজন পুরুষ দিব্যি দাঁড়িয়ে যেতে পারবে। তাই লোকসান কে গুনতে চায়? তাছাড়া একজন নারী বাসে দাঁড়িয়ে গেলে কী কী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তা কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা।
নারীদের বাইরে যাওয়া নিয়ে যখন ৯০ শতাংশেরই জোর আপত্তি, সেখানে বাসে উঠে তারা তাদের সিট দখল করবে এটাই অনেকে মেনে নিতে পারেন না!
একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি, সেদিন বাসে এক নারী ওঠায় আমি সিট ছেড়ে দিয়ে তাকে বসার আমন্ত্রণ জানালাম। সেই নারী সিট পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে এক পুরুষ সিংহ হুড়মুড় করে পড়লো সেই সিটের ওপর। আমি তাকে বাঁধা দিতেই চটে গেল আমার প্রতি। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম বাসের অধিকাংশের সমর্থনও সেই লোকটার প্রতি! ‘মাইয়া মানুষ দেখলেই দরদ উথলাই ওঠে’ শ্লেষের হাসিযুক্ত এমন বাক্যও বর্ষিত হলো আমার দিকে! এমন অভিজ্ঞতা হামেশাই হয়। কিন্তু করার কিছুই থাকে না।
সম্প্রতি বাসে নারীদের সংরক্ষিত আসনে অন্যদের বসা বিষয়ে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টি আমাদের মানে পুরুষদের একটি অংশ কীভাবে নিয়েছে তা সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়ায়ই স্পষ্ট। তাই ‘নারীদের সুবিধার্থে’ এ আইন পাশ হলেও ফল উল্টো হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা।
কারণ প্রথমত বাসওয়ালারা তাদের তুলতেই চাইবে না। দ্বিতীয়ত উঠলেও নানা কটু কথা শুনতে হতে পারে তাদের। আর চিরাচরিত ভোগান্তিতো আছেই। তাই নারীদের জন্য আইন যখন করলেনই আরেকটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে হতো না?
সার্বিকভাবে না হোক অন্তত সরকারি বিআরটিসির অর্ধেক বাসও যদি কেবল নারীদের পরিবহনের জন্য নির্ধারণ করা হতো তবে ফল অনেক ভালো হতো বলে মনে করি। তারপর একটা কার্যকর জরিপের মাধ্যমে শহুরে কর্মজীবীদের মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত বের করে সে অনুপাতে বাস বরাদ্দের জন্য পর্যায়ক্রমে সিটি বাস কোম্পানিগুলোকেও বাধ্য করা যেত। তাতে অনেক ধরনের হয়রানি এবং ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেত নারী এমনকি পুরুষও!
কেউ কেউ আবার ভাবতে পারেন আমি নারী-পুরুষ আলাদা করে সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছি! তবে আমাদের ‘মেন্টালিটি এবং অভ্যাস’ সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তাদের কেউ কেউ আমার সাথে একমত হতেও পারেন। নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে শেখার মত মানসিকতা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত অন্তত নারীদের অসুবিধাগুলোর কথা বিবেচনা করে না হয় হলামই একটু সংকীর্ণ!
সাখাওয়াত আল আমিনের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/যুথি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]