
১৯৭১ সাল ২৫ মার্চ।
সকালবেলাও আমরা দু'বোন যথারীতি কলাভবনে ছাত্রলীগ-এর মেয়েদের যে আমর্স ট্রেনিং দেয়া হতো, প্রতিদিনের মত তাতে অংশ নিয়েছি। পেয়ারু ভাই আর দুদু ভাই আমাদের ইউ ওটি সি র ডামি রাইফেল দিয়ে কলা ভবনের ভিতরে ডাকসু অফিসের সামনের বারান্দায় প্রশিক্ষণ দিতেন।
এইদিনে আমাদের ট্রেনিং ছিল কিভাবে একটি শত্রু ক্যাম্প দখল করে তাতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াবো।
আমরা ডামি রাইফেল নিয়ে কলা ভবনের ছাদে উঠে স্ক্রল করে এগিয়ে গেলাম। তখন কলা ভবনের গেট এর উপর একটি গম্বুজের মতো স্থান ছিল যার উপর পতাকা লাগানোর একটি স্ট্যান্ট ছিল যাতে পতাকা ওড়ানো হতো বিশেষ বিশেষ দিনে।
গম্বুজের মাথায় একটি লোহার রড ছিল যেখানে জাতীয় পতাকা লাগানো হতো। আমরা ডামি রাইফেল সাথে ওই গম্বুজের মাথায় একটি লোহার রড পর্যন্ত যাবার জন্য স্ক্রলিং করছি। তখন নিচে তাকিয়ে দেখলাম একটি রিক্সা যাচ্ছে, যা বই দিয়ে ভর্তি।
রিক্সার সিট এবং পা দানি ভর্তি বই আর বই। তার পাশে পাশে হেঁটে যাচ্ছিলেন প্রফেসর জি সি দেব, প্রখ্যাত দার্শনিক, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক।
আমরা দুদু ভাই আর পেয়ারু ভাইর নেতৃত্বে শত্রু ক্যাম্প দখল করার মতো করে বাংলাদেশের পতাকা উড়ালাম কলা ভবনের ছাদে এবং ডামি রাইফেলগুলি উঁচিয়ে উল্লাস প্রকাশ করলাম যেন সত্যি সত্যি পাকিস্তানী হানাদার ক্যাম্প দখল করেছি।
তখন কিন্তু আমরা জানি না রাতেই পাক হানাদার বাহিনী রাতের আধারে ঢাকা বিশ্ববিদালয় আক্রমণ করবে এবং নির্বিবিচারে ছাত্র- শিক্ষক হত্যা করবে। সেই ভয়াল ২৫ মার্চ রাতের এবং ২৬ তারিখের পৈশাচিক তাণ্ডব, নিরস্ত্র ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের হত্যাযজ্ঞও দেখতে হবে .........
২৫ তারিখ কালরাত্রিতে আর পরদিন সকালে অনেক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হত্যা করা হলো। প্রফেসর জি সি দেবকেও ২৫ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয় জগন্নাথ হলো।
শ্রদ্ধাঞ্জলি সেই সকল শহীদদের এবং ঘৃণা জানাই পৃথিবীর বর্বরতম গণহত্যার যা ঘটেছিল ১৯৭১ সালে ২৫/২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ...
লেখক : নাজমা শাহীন, অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]