শিরোনাম
আমরা অন্যকে ছোট করে বড় হতে চাই
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৭
আমরা অন্যকে ছোট করে বড় হতে চাই
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শুনলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বাস নাকি ভাংচুর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, এর প্রতিশোধ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাংচুর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস!


এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। শুধু এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে না, আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেয়া হয় - আমরাই শ্রেষ্ঠ! আর এই শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য আমরা নিয়মিতই অন্যদের ছোট করে থাকি।


আর এই ছোট করা আমরা শিখি আমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকেই।


উপরের যে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হচ্ছে নিঃসন্দেহে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝেই পড়ে। এতদুর পর্যন্ত ঠিকই আছে। পৃথিবীর নানান দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। সেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম দিকে থাকবে, তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শেষের দিকে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।


কিন্তু এজন্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে গোনাতেই ধরা যাবে না, কিংবা তাদের ক্রমাগত ছোট করার ব্যাপার অন্তত পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে আছে কী-না, আমার জানা নেই।


আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা অন্যকে ছোট করে বড় হতে চাই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বরং ছাত্রদের শেখায় - আমরাই সেরা, অন্য কোথাও আবার পড়াশুনা হয় নাকি! এজন্য ছাত্রদের মানসিকতাও হয়ে যায় এমন!


শুধু এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় না, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই অবস্থা। তারা তাদের চাইতে নিচু অবস্থানে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মানতেও নারাজ! অর্থাৎ যে করেই হোক অন্যকে ছোট করে নিজেদের জাহির করতে হবে!


ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এক ছেলে দুঃখ করে আমার পোস্টে এসে কমেন্ট করেছে


-স্যার, বুয়েটে কিংবা ঢাকা মেডিক্যালে পড়ি না বলে ভালো টিউশনি পাই না; কিংবা একই রকম টিউশনি পেলে বেতন দেয় কম, কারণ বুয়েটে পড়ি না!


অর্থাৎ বুয়েটে পড়লে কিংবা ঢাকা মেডিক্যালে পড়লে ওই ছেলে কিংবা মেয়ে টিউশনিতে গিয়ে ভালো পড়াবে এটা আমরা ধরেই নিয়েছি! কি অবাক কাণ্ড!


আমার খুব কাছের একজন আমাকে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটা ঘটনা বলেছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে গ্রাম থেকে। টিউশনি দরকার, নইলে কোনোভাবেই চলছে না। কিন্তু সব জায়গায় বুয়েটের ছাত্র খুঁজে। শেষমেশ আমার ওই পরিচিত বুয়েটের একটা আইডি কার্ড বানিয়ে টিউশনি পেয়েছিলো।


মজার ব্যাপার হচ্ছে, যাকে সে পড়িয়েছিলো, সেই মেয়ে কিন্তু ঠিকই গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। অথচ এরা জানেই না যে, তার টিউশনির শিক্ষক বুয়েটের ছাত্র ছিলো না!


আমরা লেখাপড়ার মাঝেও ব্র্যান্ড তৈরি করে ফেলেছি। অনেকটা বাটা কিংবা এপেক্সের জুতা, ক্যাটস আই'র শার্ট কিংবা আই ফোন টাইপ ব্যাপার!


বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজেদের এভাবে(সেরা)প্রডাক্ট হিসেবে জাহির করছে! সেটাও আবার নিজেদের জাহির করতে গিয়ে অন্যকে ছোট করে। চিন্তা করে দেখুন, না হয় একটা বাস ভাংচুর করেছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা; তাই বলে এর প্রতিশোধ হিসেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভেঙ্গে দিতে হবে কেন? কারণ আর কিছুই না - আমরাও তোমাদের সমান, আমরাও পারি- সেটা জাহির করতে হবে না!


আমি যতদূর জানি পৃথিবীর নানান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শেখানো হয় কিভাবে উদার হতে হয়, কিভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে হয়। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়- কিভাবে অন্যকে ছোট করে বড় হতে হয়!


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com