নারীদিবস পালন হচ্ছে ও হবে। তবে নারী অধিকার জিনিসটা কি তা বুঝতে সমাজের পুরুষকুলের সময় লাগবে। একটি ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি দিচ্ছি :
আমার স্ত্রী ১৯৯৩ সালে যখন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রথম ময়মনসিংহে পোস্টিং নিয়ে যায়, তখন বাসস্থানের দৃশ্চিন্তা না থাকলেও আমাদের দুশ্চিন্তা ছিল সে ওখানে একা একা থাকবে কি করে? আমাদের তখন বিয়ে হয়েছে মাত্র ৪-৫ মাস। আমার অনেক আত্বীয়স্বজন গোপনে পরামর্শ দিতে থাকলেন 'চাকরিটা ছেড়ে দিতে বল'। আমি কান দেইনি কারণ, আরেক নারীর মুখ সবসময় মনে ভেসে উঠতো, তিনি আমার 'মা'। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পর্যায়ের একজনের যা বেতন তখন তা থেকে মাকে প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যেত যদিনা আমার স্ত্রী চাকরি করতো। স্ত্রীর চাকরি ছাড়ার সুপরামর্শ আমাকে গিলাতে না পেরে শুরু হয়ে গেল নানান কানাঘুষা।
সেটা এরকম :
আমার খালাশ্বশুরের সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বিশাল সরকারি বাসভবনের একতলায় থাকতো কাজের লোক আর দারোয়ান। খালাশ্বশুর প্রতিদিন ঢাকা থেকে যাতায়াত করতেন। আর রাত্রে দোতলায় উঠার সিড়িঁর দরজায় তালা দিয়ে দোতলার একটি বেডরুমে একাই থাকতো আমার বউ। সে যে খুব সাহসী মেয়ে তা বলাই বাহুল্য। সপ্তাহের ছুটিতে বউ ঢাকায় আসতো অথবা আমি ময়মনসিংহে যেতাম। এই ব্যাবস্থা চলেছিল প্রায় ৩ বছর। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হচ্ছিলো না, কিন্তু আমার প্রতিবেশী সমাজের পুরুষকুলের মধ্যে খুব মুখরোচক গল্প চালু হয়েছিল এবং যথা নিয়মে আত্বীয়স্বজন আবার মাঝে মাঝে গোপনে চাকরি ছাড়ার পরামর্শ দিতেন। আর আমি যথারীতি নির্বিকার। স্বীকার করি যে, আমার সংসার চালানোর খাই-খরচায় আমার বৌয়ের দেয়া অনুদানটির প্রতি আমার চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু সমাজের এই সব অকথা-কুকথায় আমার নির্বিকার থাকার বিবেচনাটি ছিল অন্য জায়গায়।
সেটা এরকম :
৩-৪ লক্ষ বিসিএস পরীক্ষার্থীর সংগে পাল্লা দিয়ে ১১তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যে জনা ২০ নারী চাকরি পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আমার স্ত্রী অন্যতম। এটি আমার কাছে একটি অসাধারণ কৃতিত্ব মনে হয়েছিলো। এবং আমি সেজন্য তাঁর চাকরিক্ষেত্র সংক্রান্ত যাবতীয় পুরুষালি উপদ্রব মোকাবিলা করে তাঁর চাকরি করার অধিকারে সহযোদ্ধা হওয়ার সিদ্ধান্তে এখনও অটল। জনান্তিকে বলে নেই যে, আমি আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে এক মুহূর্তের জন্যেও কখনো অবিশ্বাস করি না। আর দাম্পত্যজীবনের মান-অভিমান, টানাপোড়েন এই বিশ্বাস টলাতে পারেনি। কারণ, সংসারের এসব চড়াই-উৎরাই এই প্রতীতি বিষয়ে মূখ্য নয়।
সুতরাং 'নারীর অধিকার' সোনার পাথরবাটি নয়, এটি অর্জনযোগ্য। তবে পুরুষকুলকে এটা নারী দিবসে মিছিলে নয়, ব্যক্তি জীবনের দৈনন্দিন ঘানি টানায় দেখাতে হবে।
তোরাব রহিমের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]