'তিনি প্রশ্ন করেন, উনি আওয়ামী লীগের কোন পদে আছেন?’
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:০০
'তিনি প্রশ্ন করেন, উনি আওয়ামী লীগের কোন পদে আছেন?’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সকালে ঘুম থেকে উঠে জাফর ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে চমকে উঠলাম। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি (১৯৭৯-৮০) এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ভদ্র, সজ্জন এবং সত্যিকার অর্থেই ত্যাগী কর্মী জাফর আহমেদ ভাই। গত ৪৫ বছরে চট্টগ্রামে এমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নাই যাতে তাঁর উপস্থিতি এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল না।


গত পরশু পর্যন্ত চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী নোমান ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন গভীর রাত পর্যন্ত। গতকালও বিকেলে বের হয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার জন্য। পথিমধ্যে শরীর খারাপ লাগায় অন্যদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যান। রাতেই ইন্তেকাল করেন। আ জ ম নাসির ভাই, বন্ধু জামসেদুল আলম চৌধুরী এবং মোসলেহউদ্দিন মনসুরের সাথে ফোনে কথা বলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে জাফর ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে কষ্টে মন ভারি হয়ে উঠে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযাত্রীদের অনেকের সাথে দেখা হয়।


বিস্ময়ের ধাক্কা লাগে জানাজার আগে লালদীঘি মসজিদে গিয়ে ঈমাম সাহেবের একটা প্রশ্নে। জানাজার ঘোষণা দিতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন উনি আওয়ামী লীগের কোন পদে আছেন? আশে পাশে সবাই ওনার পরিচয় সাবেক ভিপি ও সভাপতি এসব বলছিলেন। তরুণ ইমাম সাহেব বুঝে উঠছিলেন না এত এত নেতার সমাগমে এ জানাজার মৃতের পরিচয় সম্পর্কে।


মাইনউদ্দিন হাসান চৌধুরী মাইক হাতে নিয়ে জাফর ভাইয়ের পরিচিতি তুলে ধরে ইমাম সাহেবকে উদ্ধার করলেন। তারপর আমিসহ সবাই বলাবলি করে নিশ্চিত হলাম ‘৮০ এর দশকের মাঝামাঝিতে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে সফলভাবে বিদায় নেয়ার পর গত ৪০ বছরে আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কোন কমিটিতে সদস্য পদেও উনার কোন ঠাই হয়নি। কিন্তু গত ৪০ বছরে দলীয় কর্মকাণ্ডে উনার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে কখনও কারো বুঝার উপায় ছিল না তিনি কোন কমিটিতে আছেন কি নাই। সদা হাস্যোজ্জ্বল উচ্চশিক্ষিত অমায়িক জাফর ভাইয়ের মুখে কখনো হতাশার ছাপ ছিল না।


কিন্তু উনার জানাজার পর সারাদিনে সব কিছু হিসাব মিলাতে না পেরে চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছি আমি। হিসাব মিলাতে পারছি না বিগত ২০/২৫ বছরে যারা নিজ দল এবং বিভিন্ন দল থেকে উড়ে এসে এমপি মন্ত্রী মেয়রসহ কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় পদ পদবীতে এসেছেন তাদের এমন কি যোগ্যতা ছিল যা জাফর ভাইয়ের ছিল না। উনার আকাঙ্ক্ষাও হয়তো বেশি ছিল না। মহানগরের সদস্য বা ছোট খাট পদ পদবী পেলেই হয়ত উনি সন্তুষ্ট থাকতেন। কারণ চির অকৃতদার জাফর ভাইয়ের সমস্ত হৃদয় জুড়ে ছিল বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগ। সিডিএর সদস্য বা ওয়াসার সদস্যের মত কিছু পেলে হয়ত অনেক অনেক সম্মানিত বোধ করতেন।


কারা এসেছেন বিগত বছরগুলিতে এ সমস্ত পদে? শফর আলী ভাই, কদর ভাই, বখতিয়ারউদ্দিন খান ভাই, ইসহাক ভাই, ইউনুছ ভাই, সিরাজউদ্দৌলা ভাই, শফিউল আজম ভাই, জামসেদ উল আলম চৌধুরী, মরহুম রফিকুল হোসেন বাচ্চুসহ কিংবদন্তি তুল্য ‘৭৫ পরবর্তী ছাত্রনেতাদের কি সম্মানিত করা যেত না এ সমস্ত পদে পদায়ন করে? যতদূর জানি আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক কাদের ভাইয়ের সাথেও জাফর ভাইয়ের খুব সুসম্পর্ক ছিল এবং কাদের ভাই উনাকে খুব স্নেহ করতেন। এখন জাফর ভাই সব চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে।


জানাজায় ‘৭০, ‘ ৮০ এবং ‘৯০ এর দশকের কিংবদন্তিতুল্য অনেক ছাত্র এবং যুব নেতাদের অনেকের জৌলুসহীন মুখাবয়ব দেখলাম। যাদের রক্ত, শ্রম এবং ঘামের বিনিময়ে আজকের এই আওয়ামী লীগ। যাদের দেখার বা খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয়া শত সহস্র জাফর ভাইয়ের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠা আওয়ামী অঙ্গনকে হালকা করার কোন উপায় কি নাই? কেন জানি সব সময় মনে হয় দুর্দিনের নেতা কর্মীদের এখন খুবই দুঃসময়। গত ১৫ই জানুয়ারি জাফর ভাইয়ের সাথে শেষ দেখা চট্টগ্রামে আমার বাসায় হঠাৎ করে জড়ো হওয়া আমাদের সময় এবং তার আগের ছাত্র নেতাদের হঠাৎ আড্ডায়। ক্ষমা করবেন জাফর ভাই। পরকালে শান্তিতে থাকুন এই দোয়া করি।


লেখক : আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ও সাবেক ছাত্রনেতা।


(ফেসবুক ওয়াল থেকে)

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com