শরীরটা গত কয়েক দিন ধরেই খারাপ। ইউনিভার্সিটি থেকে একটু আগেই বাসায় ফিরেছি। ফেরার পথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলল
-তুমি দুই দিন হাসপাতালে রেস্ট নেও।
আমি অবাক হয়ে বললাম
-এটা কি বলছ! হাসপাতাল কী রেস্ট নেয়ার জায়গা নাকি?
ডাক্তার খানিক হেসে বলল
-আমি যদি তোমাকে এখন বলতামঃ তোমার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত, তাহলে তুমি হয়তো ভয় পেয়ে যেতে।
-তাহলে কয় দিন থাকতে হবে?
-কেবল আজ রাতটা থাকলেই হয়ে যাবে আশা করছি।
আমি ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত বাসায় ফেরত এসেছি। যদি এক রাত হাসপাতালে থাকতেই হয়, তাহলে দুই একটা কাজ সেরে যাওয়া উচিত হবে, এই জন্যই বাসায় আসা। আমি সাধারণত আমার এপার্টমেন্টে ঢুকার আগে সব সময় লেটার বক্স চেক করি। আজও করছিলাম। দেখি একটা খোলা চিঠি। পড়তে গিয়ে দেখি লেখা
-আমিনুল, তোমার ফোন কি বন্ধ ছিল আজ? বাসায়ও নেই দেখছি। তাই ভাবলাম তোমার লেটার বক্সে চিঠিটা রেখে যাই। তুমি কি আজ আমাদের সাথে রাতের খাবার খেতে পারবে? একদম না করা যাবে না কিন্তু।
যেই ভদ্রমহিলা এই চিঠি রেখে গেছেন, তিনি আমার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। একবার জমে যাওয়া বরফের মাঝে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে ধরেছিলাম। সেদিনই পরিচয়। ভদ্রমহিলা আমাকে মনে রেখেছেন। তার বাসায় যে কোন আয়োজন হলেই তিনি আমাকে দাওয়াত দিয়ে যান। এর আগের দুটো দাওয়াতে আমি যেতে পারিনি। এবারের'টায় না গেলে হয়তো তিনি মন খারাপ করতে পারেন।
কারন চিঠির শেষ দিকে ছোট্ট করে লেখা ছিলো- রাত বারোটা পর্যন্ত থাকতে হবে কিন্তু। ভালোবাসা দিবস শুরু হবে, তারপর আমি তোমাকে একটা উপহার দিবো। তুমি কেবল এরপরই আমার বাসা থেকে বের হতে পারবে।
প্রায় আশি বছরের বৃদ্ধ এই মানুষটার ভালোবাসা প্রকাশের ভাষা দেখে আমার চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে এসেছে। আমরা মানুষরা আসলেই বড্ড অদ্ভুত। যাদের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা থাকে, তারা হয়তো এক জীবনে একটা মুহুর্তের জন্যও ভালো করে মনে রাখে না; আর যাদের কাছ থেকে কোন প্রত্যাশা থাকে না, তারাই হয়তো ফিরে ফিরে মনে করে আমাদের!
আমি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে আমার ডাক্তারকে সব কিছু বর্ণনা করে বললাম
-ডাক্তার, কোন মানুষের এতো চমৎকার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আজ হাসপাতালে ভর্তি না হলে কোন সমস্যা হবে না তো?
ডাক্তার চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললেন
-জীবনটা সত্যিই খুব মায়াময় আমিনুল। তুমি আমার মনটা ভালো করে দিলে। তোমার সন্ধেটা ভালো কাটুক।
ফোন রেখে আমি এই লেখা লিখতে বসেছি। ডাক্তারের হয়তো জানাও নেই- কি ভয়ংকর মন খারাপের মাঝ দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম। অথচ হঠাৎ করে মনটা খানিক ভালো হয়ে গেলো এই ভেবে- আমার কথা শুনে অন্তত একজন মানুষের মন তো ভালো হয়েছে!
জীবনটা আসলেই খুব মায়াময়।
আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/পলাশ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]