শিরোনাম
যেভাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৮
যেভাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন শেখ হাসিনা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানোর প্রধান কৃতিত্ব মিডিয়া তথা মিজানুর রহমান মিজান প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক খবর-এর।


ঘটনাটি ১৯৮১-সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। শেখ হাসিনা তখন দিল্লীপ্রবাসী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে (সপরিবার) হত্যার সময়ে ছিলেন জার্মানীতে; স্বামী ড. ওয়াজেদের কর্মস্থলে। পরে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন ভারতে।


দেশের ক্ষমতায় একে একে খন্দকার মুশতাক, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, বিচারপতি সায়েম। অতঃপর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ সময় আওয়ামী লীগ ডাকলো কাউন্সিল। সাবেক স্পীকার মালেক উকিল তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। কিন্তু দলের নতুন প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে মহাদ্বন্দ্ব। দল হয়ে গেলো ত্রিধাবিভক্ত। সিদ্ধান্তহীনতায় দুইদিনের কাউন্সিল তিনদিনে গড়ালো।


দ্বিতীয় দিনের সকালেই বোমা ফাটালো সাপ্তাহিক 'খবর'। চমক লাগানো শিরোনাম : 'শেখ হাসিনাই আ'লীগের সভাপতি'! কাউন্সিলের পুরো পরিবেশ বদলে গেলো, সৃষ্টি হলো নতুন উদ্দীপনা। অধিকাংশ কাউন্সিলর শ্লোগান দিলো : 'আনন্দের বন্যা/ তোমার আমার সভাপতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা'!


ঘটনার আকস্মিকতায় হবু সভাপতিরা হতবাক! ফোন দিলেন 'খবর' সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে। 'আমি রাসেল বলছি' ধারাবাহিকের জন্যে তিনি আওয়ামী মহলে বেশ সমাদৃত। তবে শেখ হাসিনার সভাপতি পদে আসীন হওয়া নিয়ে আদৌ কোনো তথ্য ওনার কাছে ছিলো না। বিষয়টি জানতেন তৎকালীন বার্তা সম্পাদক। কিন্তু হবু নেতাদের ফোন পেয়ে তিনি (সম্পাদক) কিছুটা ভাব নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'খবর যা ছেপেছি তা সত্য। আমাদের কাছে গোপন তথ্য আছে। কিন্তু বিস্তারিত বলা যাবে না। সময় হলেই জানবেন।'


এরপর সম্পাদক মিজান সাহেব ঠেসে ধরলেন বার্তা সম্পাদককে। বললেন, 'এই খবর আপনি কই পেলেন? সবাই আমাকে ফোনে জ্বালাচ্ছে। সরকারও জ্বালাবে। কী জবাব দেবো বলেন?'


বার্তা সম্পাদক গম্ভীর। শুধু বললেন, 'রিপোর্টটি আমরা করেছি, দায়িত্ব আমাদের। প্রয়োজনে বলে দেবেন, বার্তা বিভাগ জানে'।


বার্তা সম্পাদক এর বেশি কিছু জানাতে নারাজ। আসলে জানাবেনই বা কী? তিনি নিজেই তো কিছু জানতেন না।


আমি তখন খবর গ্রুপের সাপ্তাহিক চিত্রবাংলায় খণ্ডকালীন প্রতিবেদক। ভেতরের অনেক না জানা ঘটনার নীরব দর্শক। আসলে ওই সপ্তাহে খবর-এর 'লীড নিউজ' পাচ্ছিলেন না বার্তা সম্পাদক। কাগজটির বাজার তখন রমরমা। গরম সংবাদ রাখতেই হয়। নতুন নিউজ খুঁজতে গিয়ে চোখ পড়লো একটি দৈনিকের সংবাদে - 'সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বিরোধ। আগামীকালও চলবে আ'লীগের কাউন্সিল'!


এই ছোট্ট সংবাদটিকেই পুঁজি করলেন চৌকস বার্তা সম্পাদক। সভাপতি নির্বাচন নিয়ে গণ্ডগোল! নিজেই দিয়ে দিলেন সমাধান। যোগ করলেন যুক্তিও : দলের ভাঙ্গন রোধকল্পে বঙ্গবন্ধুকন্যার বিকল্প নেই। দেড় বছর আগে দল ভেঙ্গেছিলেন মিজান চৌধুরী। ১৯৭৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আ'লীগ (মিজান) অংশ নিয়েছিলো। এতে মূল দলের অনেককিছু হারাতে হয়েছে। মূল আওয়ামী লীগও আসন পেয়েছে খুব কম। তাই আওয়ামী শিবিরে হতাশা, পাশাপাশি নেতৃত্বের কোন্দল। তাই এবার ভাঙ্গন ঠেকানো জরুরী। অতএব শেখ হাসিনা সভাপতি হলে দলের জন্যে তা হবে মহামঙ্গলময়। তিনি সেতুবন্ধ হয়ে সবাইকে এক রাখতে পারবেন। সংকটকালে সবাই তাকে মানবেনও। এ কারণেই সভাপতি পদে অবশেষে তিনিই আসছেন। - এরকমই ছিলো প্রতিবেদনের ভাষ্য।


দিল্লীবাসী শেখ হাসিনা নিজেও জানতেন না এসবের বিন্দুবিসর্গ। জানলেন পরদিন। ড. কামাল হোসেন যখন খবর-এর কপি হাতে নিয়ে দিল্লীতে মুখোমুখি হলেন। কাউকে না জানিয়ে তিনি ঢাকা থেকে সোজা গেছেন শেখ হাসিনার কাছে। দল বাঁচাতে বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই প্রয়োজন। যুক্তি দিয়ে বোঝালেন, রাজিও করালেন। বিকেলেই জরুরী টেলেক্স মেসেজ এলো আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে - 'শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বসতে সম্মত। দায়িত্ব গ্রহণ করতে অচিরেই ফিরছেন'।


অবশেষে ফিরলেন ১৯৮১-এর ১৭ মে; বৃষ্টিভেজা দিনে।


তারপর বদল হয়েছে অনেক কিছুর। খবর গ্রুপও হারিয়ে ফেলেছে তাদের রমরমা দিন। সেই বার্তা সম্পাদক এখনো বেঁচে আছেন, তবে সাংবাদিকতায় নেই। আছে শুধু স্মৃতি। একটি আচমকা শিরোনামের না-ভোলা স্মৃতি। খবর-এর পাতাতেই প্রথম মুদ্রিত হয়েছিলো অজেয় ভবিষ্যতবাণীটি! চোখকাড়া ৭২ পয়েন্টে ছাপা - 'শেখ হাসিনাই আ'লীগের সভাপতি!'


সালেম সুলেরীর ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com