
জরুরী কাজে এ মাসের ২ তারিখে ৭ দিনের জন্য বাংলাদেশ যেতে হয়েছিল। রাতে এয়ারপোর্ট পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম পরের দিন ৩ তারিখ থেকে রোজা শুরু হবে।
প্রথম ধাক্কা- সেহেরী না সহুর?
হোটেলে পৌছে রুমে গিয়ে ডাইনিংয়ে রিং দিয়ে অবাক হলাম। তাদেরকে বুঝাতে ব্যর্থ হলাম সেহেরী! বার বার করে সচেতনভাবে তারা সহুর শব্দটি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলো। গভীর রাতে তর্ক বৃথা তাই সহুরের মেনু চাইলাম। মেনু পেয়ে আরেক ধাক্কা! জীবনে কখনও শুনিনি সেহেরীর মেনু- মাটন, কাচ্চি কিংবা চিকেন বিরিয়ানি আর যতসব ভিনদেশী খাবার দাবার। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আজকাল নাকি এটাই ট্রেন্ড!
সকালের ধাক্কা- রামাদান কারীম!
সারা জীবন শুনে এসেছি ‘মাহে রমজান’, ‘খোশ আমদেদ রমজান’ কিংবা ‘রমজানুল মোবারক’- এইবারই প্রথম শুনলাম এবং বিশাল বিশাল সাইন দেখলাম- ‘রামাদান কারীম’। লবিতে একজন শেতাঙ্গ ভদ্রলোক বিনীতভাবে জিজ্ঞেস করলো রামাদান কারীম মানে কি? সে বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেছে এবং শুনে এসেছে ‘রামাদান মোবারক’ যেটার মানে সে জানে। আমিও গুগল করে জানতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছু পেলাম না।
বিকেলে ইফতারীর ধাক্কা- উট এবং জোব্বা!
হোটেলে ইফতারীর জমজমাট আয়োজন। চতুর্দিকে ঝুলছে চাঁদ-তারা, জৌলুসময় আরবীয় সাজানো গোছানো সাথে প্রমাণ সাইজের মরুর উট! ভাবখান পারলে জ্যান্ত উট বেঁধে রাখে! ওয়েটার এবং ওয়েট্রেস সবাই জোব্বা আর টার্কিশ পোশাকে সজ্জিত। সাথে বাজছে আরবীয় মিউজিক!
এ কোন বাংলাদেশ? এ কোন সংস্কৃতি? ধীরে ধীরে আমরা কি কারণে এই মরু সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছি? ঐ আরবের লোকরা তো বাংলাদেশের লোকজনকে মিসকিন ভাবে। যতই আমরা উট আর জোব্বা দিয়ে সাজি না কেন দিন শেষে ওরা আমাদেরকে মিসকিনই বলবে। বিভিন্ন ব্যাংক, কর্পোরেট কোম্পানি আর বড় হোটেলগুলো ধর্মীয় উৎসবের নামে বিজাতীয় যা করছে তা এখনই বন্ধ করা জরুরী। এই উদ্ভট আয়োজনের সাথে ইসলাম ধর্মের কি সামান্য সম্পর্ক আছে? ধর্ম মন্ত্রাণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয় কি আরও ঘুমিয়ে থাকবে?
বিঃদ্রঃ- খেটে খাওয়া মানুষের এসব পরিবর্তনে কিছু যায় আসে না। রোজার মাসে তারা ঘর্মাক্ত অবস্থায় একটু পানি, একটু ছোলা মুড়িতেই সন্তুষ্ট।
-লাইলাক শহীদ
বিবার্তা/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]