শিরোনাম
ক্রিকেটে পরাজয়, দেশপ্রেমে জয়
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪৩
ক্রিকেটে পরাজয়, দেশপ্রেমে জয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত দু’বার যখন দেশে গিয়েছি, আবিষ্কার করলাম আমার নাক প্রায় সবসময় বন্ধ হয়ে থাকে, দিনরাত কেবল হাঁচি দেই; নাকের ড্রপ ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেই পারি না! দেশ থেকে বিদেশে ফিরে আমার ডাক্তারকে জানালাম ব্যাপারটা।


আমাদের এখানে সবারই ফ্যামিলি ডাক্তার থাকে। অর্থাৎ যে ডাক্তার আপনার মোটামুটি সব ইতিহাস জানে। ডাক্তারকে সব খুলে বললাম। ভদ্রমহিলা বললেন, তোমার মনে হয় দেশের আবহাওয়া কিংবা পরিবেশে এলার্জি আছে।


-কি বলছো তুমি! নিজ দেশের অবহাওয়ায় এলার্জি! আমি জন্মেছি সেখানে, জীবনভর সেখানেই ছিলাম।


ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর বললেন, দাঁড়াও! এরপর যাতে এমন না হয়, এর জন্য অবশ্য চিকিৎসা চলতে পারে!


আমি তার দিকে তাকিয়ে মোটামুটি সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বললাম, নিজ দেশের পরিবেশে যদি আমার এলার্জি থাকে, তাহলে সেই চিকিৎসার আমার দরকার নেই! আমি এই এলার্জি নিয়েই থাকতে চাই।


আমি এই কথা বলে চলে এসেছিলাম। ভদ্রমহিলা আমার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন।


এর কিছুদিন পর আমার এই ফ্যামিলি ডাক্তার আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। সেই ই-মেইল বাংলা করলে দাঁড়ায়, আমিনুল, আমি তোমার মতো নিয়মিত লেখালেখি করি না। কখনোই আসলে পত্রপত্রিকায় লিখিনি। তবে তোমার সেই দিনের আচরণে আমি এতোটাই বিমোহিত হয়েছি যে শেষমেশ পত্রিকার জন্য একটা লেখা লিখে ফেলেছি। তুমি তো আর আমাদের ভাষা বুঝবে না, এরপরও তোমাকে লেখাটা পাঠালাম। এই লেখায় আমি দেশপ্রেমের কথা বলতে গিয়ে তোমাকে উদাহরণ দিয়ে লিখেছি, দেশপ্রেম এমন এক ব্যাপার, যেটা আসলে কোনো যুক্তি মেনে চলে না!


আমার শরীর কয়েক দিন ধরে বেশ খারাপ। তাই বাধ্য হয়েই আমার ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে যেতে হলো। আমি ওর রুমে ঢোকার সাথে সাথেই দেখি সে উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম। কারণ, এসব দেশে এমনকি শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলেও কেউ উঠে দাঁড়ায় না। এই নিয়ম এসব দেশে নেই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালে কেন?


-ওই দিনের ঘটনার পর তোমার প্রতি আমার একধরনের শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি হয়েছে, তাই এমনিতেই উঠে দাঁড়ালাম।


ডাক্তার মহিলার এই কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে প্রায় পানি চলেই আসছিলো। অনেক কষ্টে আটকিয়েছি।


আমি অনেক বাংলাদেশিকে দেখেছি, যারা কোনোভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারলেই হয়েছে, ক্রমাগত নিজ দেশের সমালোচনা করতে ব্যস্ত! এমনকি পারলে নিজেরা যে বাংলাদেশি সেটাও স্বীকার করতে চায় না। অথচ এরা বুঝতেও পারে না, নিজ দেশের সমালোচনা করলে বিদেশিরা বরং তাদের খারাপ চোখেই দেখে। কারণ, তারা হয়তো তখন ভাবে, যে মানুষ বিনা কারণে নিজ দেশের সমালোচনা করছে, তার পক্ষে হয়তো অন্য যে কারো সমালোচনা করা সম্ভব।


নিউজিল্যান্ডের সাথে টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ায় হয়তো অনেকেই খুব কষ্ট পেয়েছেন। অথচ অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, এই টেস্টে হেরে যাওয়ার পরও আমার মন একটুও খারাপ হয়নি, বরং অদ্ভুত একরকম আনন্দ হচ্ছিলো। দলের অধিনায়ক মুশফিক এমনিতেই ইনজুরিতে ভুগছিলেন। আমার ধারণা, অন্য যে কোনো দেশের খেলোয়াড় হলে ওই অবস্থায় মাঠে নামতেন না। কিন্তু খেলাটা বাঁচানোর জন্য ছেলেটা মাঠে নেমে পড়লো এবং মাথায় আঘাত পেয়ে হসপিটালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছে।


ইমরুল কায়েসের অবস্থাও ছিল খুবই খারাপ। দিনের খেলা যখন শুরু হয়, তখন নিউজিল্যান্ডের ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, ইমরুল যদি আজ খেলতে নামে, সেটা হবে এক নতুন বিস্ময়! এই ইমরুল সবাইকে অবাক করে দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে খেলতে নেমে গেলো স্রেফ দেশের হয়ে খেলছে বলে!


একেই বলে দেশপ্রেম, যা আসলে কোনো যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব না। ছেলেরা হয়তো এই খেলায় হেরে গেছে। কিন্তু পৃথিবী নামক গ্রহে ভালোবাসা বলেও একটা খেলা আছে, সেই খেলায় আমাদের ছেলেরা জয়ী হয়েছে।


আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com