শিরোনাম
ডায়ালগ পরিবর্তনের সময় এসেছে
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৯:৪৬
ডায়ালগ পরিবর্তনের সময় এসেছে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

'ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না'- এই ডায়ালগের দিন শেষ! 'ভয় নয়, সতর্কতায়ই জয়'- এই ডায়ালগের দিনও শেষ। অনেক তো দেখা হলো এই দেশের প্রায় আশিভাগ মানুষ কিছুতেই কোনো রকম সতর্কই হলো না। এখন সময় এসেছে ডায়ালগ পরিবর্তনের! এখন সময় এসেছে এই ডায়ালগের-'ভয় পান, আতঙ্কিত হোন, সতর্ক হোন!'


আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাতে এসে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইকবাল (৪৩) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে! (তথ্যসূত্র: জ.ই. মামুন ও বিডি নিউজ।)


আতঙ্কিত হোন-রাস্তায় মরে পড়ে থাকার দিন যেন দেখতে না হয় সামনে!


শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় করোনা আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালে গিয়ে সিট খালি না পেয়ে সেখান থেকে স্ত্রীকে এই মুমূর্ষু অবস্থায়ই মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে নিজের কোমরের সাথে কাপড় পেচিয়ে বিএসএমএমইউ'র দিকে ছুটছেন স্বামী। সেখানেও যে সিট খালি আছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই একেবারেই। (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো।)


গতকালের তথ্যানুযায়ী ২৪ ঘন্টায়ই করোনা শনাক্ত হয়েছেন প্রায় পনের হাজার আর করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫৮জন। বায়ান্ন হাজার পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে এই পনের হাজার।


ধরে নিলাম, এই বায়ান্ন হাজারের মধ্যে ন্যূনতম দশ হাজার ছিলো পুরোন করোনা আক্রান্ত। যারা ১০ দিন বা ১৪ দিন পর দ্বিতীয়বার টেস্ট করে নেগেটিভ হয়েছেন। এখন মোট স্যাম্পল বায়ান্ন হাজার থেকে যদি এই ১০ হাজার বাদ দিই, তাহলে বাকি যে বিয়াল্লিশ হাজার থাকে সেই বিয়াল্লিশ হাজারই হলো প্রকৃত নতুন রোগী।


তাহলে হিসাব দাঁড়ালো ২৪ ঘণ্টায় বিয়াল্লিশ হাজারে করোনা পজিটিভ এসেছেন পনের হাজার। তারমানে শনাক্তের হার ৩৫%। (১০ বা ১৪ দিন পর যারা আবারো দ্বিতীয়বার করোনা পজিটিভ হয়, তাদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। তাই প্রতিদিনের পজিটিভ শনাক্তের তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করলাম না।)


এই যে শনাক্তের হার ৩৫% এটা কিন্তু শুধু শনাক্তের হার, আক্রান্তের হার নয়। গত এক-দেড় মাসে যেভাবে সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে প্রায় চোখ বন্ধ করেই বলা যায় যে সারাদেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের হার এই ৩৫ শতাংশের চেয়ে আরো অনেক অনেক বেশি।


আমরা জানি, সারাদেশে গ্রাম আছে প্রায় সাতাশি হাজার। এখন যেভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনা ছড়িয়েছে এবং যেভাবে সারাদেশ থেকে জ্বর কাশি আর শ্বাসকষ্টের রোগীর খবর আসছে তাতে যদি ধরে নিই যে, এই সাতাশি হাজার গ্রামের মাত্র ৪০ হাজার গ্রামেও প্রতিদিন গড়ে একজন করে আক্রান্ত হচ্ছেন তাহলেও কিন্তু প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার হওয়ার কথা।


প্রকৃতপক্ষে প্রকৃত সংখ্যা এর থেকে বেশি ছাড়া কম নয়!


প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে প্রতিদিন শনাক্ত এতো কম দেখাচ্ছে কেন? শনাক্ত কম দেখাচ্ছে কারণ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ অতিমাত্রায় অসচেতন এবং করোনা সম্পর্কে এখনও তাদের কানে পানি ঢুকেনি, তাই তারা করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না এবং করোনা টেস্ট করাতেও আসছে না।


তাছাড়া করোনা সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক সামাজিক ট্যাবু ছড়ানোর কারণে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই লাল পাতাকা দ্বারা স্টিগমাটাইজড হওয়ার ভয়ে করোনা উপসর্গ থাকলেও টেস্ট করাচ্ছেন না।


তাছাড়া প্রতিদিন লাখখানেক টেস্ট করানোর সামর্থ্যও এই মুহূর্তে আমাদের নেই। তাই সহজেই অনুমান করা যেতে পারে যে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।


এখন আসুন মৃত্যূর সংখ্যা নিয়ে ভাবা যাক। মৃত্যূর যে সংখ্যাটা আমরা প্রতিদিন দেখছি প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও কিছু বেশি এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন বোধ করি এই সংখ্যাটি শুধু তাদেরকেই বোঝাচ্ছে।


যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতেই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন তারা কিন্তু ডকুমেন্টেড হচ্ছেন না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন মৃত্যুর সংখ্যা এখনও হয়তো উল্লেখ করার মতো তেমন বেশি না। তবে আমরা যদি আতঙ্কিত ও সতর্ক না হয়ে এভাবে কেলাসের মতো চলতে থাকি তবে খুব অচিরেই সেই সংখ্যাটি যে উল্লেখ করার মতো পর্যায়ে গিয়ে পৌছাবে তাতে আর সন্দেহ না রাখাই ভালো।


এই কারণেই বলছি প্রকৃতপক্ষেই এখন আতঙ্কিত হওয়ার সময় চলে এসেছে। আতঙ্ক থেকেই যদি কিছু সতর্কতা আসে! আতঙ্ক থেকে যদি সতর্কতা আসে তাহলে আতঙ্কই ভালো।


(আতিকুজ্জামান ফিলিপের ফেসবুক থেকে)


বিবার্তা/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com