শিরোনাম
কিম-মুহিত বৈঠক
রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান খুঁজছে বিশ্বব্যাংক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:০৬
রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান খুঁজছে বিশ্বব্যাংক
আবুল কাশেম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) থেকে
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ ফেরত পাঠাতে দীর্ঘ সময় লাগবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এই সময়ে তাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য যে অর্থ দরকার, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে তা অনুদান হিসেবে চেয়েছি আমরা।


বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যেই এই অর্থ সংগ্রহের জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সংস্থাটি।


অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্বব্যাংক নিজেই বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে বাংলাদেশকে দেবে।


ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ নগরী বালির ওয়েস্টিন-বালি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (বিআইসিসি) শনিবার বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মুহিত।


এ সময় বিশ্ববাংকে বাংলাদেশে বিকল্প পরিচালক মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, ইআরডির সিনিয়র সচিব শফিকুল আযম ও জাকার্তার বাংলাদেশ দূতাবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথমধাপে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তার মধ্যে পাঁচ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি ডলার করে অর্থের প্রয়োজন হবে। আমরা চাই, দুই বছর রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা অনুদান হিসেবে পেতে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে সে কথাই আমরা বলেছি। তিনি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে জার্মানি, সুইডেন, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান চেয়েছে।


তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তাই তাদের ফেরত পাঠানোর কথা এখন আমরা বলছি না। আমরা চাই, ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বিশ্ব নিক। তাহলে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা আরেকটু সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।


তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান সংগ্রহে আজ বিশ্বব্যাংক সুইডেনের সঙ্গে আলাপ করেছে। আমরা ঢাকা ফেরার পর এ বিষয়ে আরো আলোচনা হবে।


বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির ইন্ডিপেনডেন্ট ইভাল্যুয়েশন গ্রুপ (আইইজি) বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তা স্বাধীনভাবে মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করার প্রস্তাব দিয়েছে।


অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এতে আপত্তি জানিয়েছি। কারণ আইইজি বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অধীনে থাকলেও প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাংলাদেশে তাদের মনিটরিং বাড়ানোর বিষয়ে কোনোমতেই আমরা রাজি হবো না। যদিও কোনো কোনো দেশ তাদের দেশে আইইজিকে মনিটর করার সুযোগ দিয়েছে।


তিনি বলেন, তিন বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু গত দুই বছরেই সে অর্থ বাংলাদেশ নিয়ে ফেলেছে। বাকি এক বছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে আরো ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে।


পুরো অর্থ না পেলেও ২০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী মুহিত।


তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আমরা তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়েছি। কারণ সংস্থাটি কেবল বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা নিয়েও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।


বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের আগে-পরে আরো কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। সেসব বৈঠকে আলোচ্য বিভিন্ন বিষয় নিয়েও বিস্তারিত জানান তিনি।


তিনি আরো বলেন, সকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালকের প্রাতঃরাশ বৈঠক ছিল। সেখানে তারা বলেছেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে সম্ভাবনা ছিল, বিভিন্ন কারণে তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ইন্দোনেশিয়ার সুনামি, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সকল দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশও এই ঝুঁকির বাইরে নয়।


পরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অর্থায়ন নিয়ে পৃথক এক সেমিনারে অংশ নেন মন্ত্রী। তবে সেখানে কয়েকবার চেষ্টা করেও নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি তিনি। পরে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুহিত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ একমাত্র বিশ্বনেতা। অন্য কোনো উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশের এই অভিজ্ঞতা নেই। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলে জলবায়ু সম্মেলনের পরপরই আমি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গড়ে প্রেসার গ্রুপ তৈরি করেছি। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা করে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, অথচ আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না। এখানে মূলত দাতারা যেসব দেশে কাজ করছে, সেসব দেশকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে।


পরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সদস্যভূক্ত দেশগুলোর ঋণঝুঁকি নিয়ে সেমিনারে যোগ দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, অতিরিক্ত ঋণের কারণে ৩০টি দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা খুবই ভালো। আমাদের ঋণ জিডিপির মাত্র ১৩ শতাংশ এবং টেকসই ঋণ। আমরা সহজ শর্তে ঋণ নেই। কঠিন শর্তের ঋণ যা নেই, তা দেশের ভেতর থেকেই নেয়া হয়।


জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো কার্বন ট্যাক্স আরোপ করিনি। তবে আমরা কার্বন বোনাস পাই বছরে প্রায় চার কোটি ২০ লাখ ডলার। বালিতে আসার আগে একটি পার্টিকে আমি বলেছি, কার্বন ট্যাক্স কিভাবে করা যায়, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিতে। সেটি পেলে পরে তা বিশ্লেষণ করা হবে। আর বাংলাদেশ থেকে ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) দুর হয়েছে। এখনকার রেফ্রিজারেটর কিংবা অন্যান্য পণ্যে সিএফসি থাকে না।


পরে জাপান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন এজেন্সির সঙ্গেও বৈঠক হয় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের। সংস্থাটি পলাশ সার কারখানার জন্য ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে।


এদিকে বালির নুসা দুয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের চলমান বার্ষিক সম্মেলন শেষ হতে যাচ্ছে আগামীকাল রবিবার। ইতোমধ্যেই সম্মেলনে ভাঙ্গণের সুর বেজে উঠছে। অনেক দেশের প্রতিনিধিরাই সম্মেলনস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বেশিরভাগই সোমবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঢাকার উদ্দেশে মঙ্গলবার বালি ছাড়বেন।


বিবার্তা/কাশেম/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com