শিরোনাম
নির্বাচনের আগে আলোর মুখ দেখছে না ১০ বড় প্রকল্প
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০১
নির্বাচনের আগে আলোর মুখ দেখছে না ১০ বড় প্রকল্প
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের অবকাঠামোখাতে উন্নয়নের ‘স্মারক’ হিসেবে দেখানো সরকারের বড় ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটিরও নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালুর করার যে লক্ষ্য নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন শুরু করেছিল সরকার, সে আশাও পূরণ হচ্ছে না। তবে আগামী অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালু হবে।


সরকারের অগ্রাধিকারভূক্ত (ফার্স্ট ট্র্যাক) ১০টি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। প্রতিবছর বাজেটে চাহিদার তুলনায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ থেকেছে এ প্রকল্পে। গত আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগস্ট পর্যন্ত সরকারের সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৫৫ শতাংশ, মূল সেতু নির্মাণে অগ্রগতি ৬২ শতাংশ। আর নদী শাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪১ শতাংশ।


তবে জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।


পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে মূল সেতুর আরও পরে। ফলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নও পিঁছিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। তবে অর্থ ব্যয় বিবেচনায় অগ্রগতি ২৩ শতাংশের বেশি। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে আগস্ট পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।


সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের বাস্তবায়ন করা পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার ৫৮৩ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলায় ১২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণা ল ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের সরাসরি রেল সংযোগ চালু হবে।


রাজধানীবাসীকে ভয়াবহ যানজট থেকে রক্ষায় চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের আটটি প্যাকেজের মধ্যে কয়েকটিতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হলেও বাকিটিতে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।


এ প্রকল্পের আটটি প্যাকেজের মধ্যে প্রকল্প এলাকার ভূমি উন্নয়নের ১ নম্বর প্যাকেজের বাস্তবায়ন ৮১ শতাংশ হলেও ২ নম্বর প্যাকেজের বাস্তবায়ন হয়েছে ১৫ শতাংশ। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়া ডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণের তিনটি প্যাকেজের একটিতে অগ্রগতিও ১৫ শতাংশ। বাকি দুটিতে কোন অগ্রগতি নেই। রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্টে ১৭ শতাংশ অগ্রগতি হলেও ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে সীমাবদ্ধ আছে ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম বাস্তবায়ন।


সরকারের অগ্রাধিকারের ১০ প্রকল্পের মধ্যে অন্য একটি হলো দোহাজারী হতে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ। ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৩২০৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালে চালুর লক্ষমাত্রা নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করা এ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ।


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাঠ পর্যায়ে সীমিত আকারে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। জমি হস্তান্তর বিলম্বের কারণে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বিলম্বিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারেও ১৬৫ একর ও চট্টগ্রামে ৪২ একর বনভূমির জমি ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে।


১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টও বিল্ডিং এর কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং ও টারবাইন বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন ঢালাইয়ের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে।


মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে চার হাজার ৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ি ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের নির্মাণ কাজ ২২ মে শেষ হয়েছে।


২৪ এপ্রিল এলএনজিবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রথম ভাসমান টার্মিনালে পৌঁছেছে। সাব-সি লাইন চূড়ান্ত পরীক্ষা করে জাতীয় গ্রীডে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। দ্বিতীয় ভাসমান টার্মিনাল আগামী অক্টোবর মাসে চালু হবে বলে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতীয় গ্রীডে এলএনজি সঞ্চালনের জন্য মহেশখালী-আনোয়ারা ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া, আনোয়ার ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম-ফেনী বাখরাবাদ গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ চলছে।


পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে থাকা রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের অগ্রগতি আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ। ১৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা।


তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩২ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বন্দরের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ড্রেজিং কার্যক্রম ও জলযান সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া, ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ কার্যত শুরুই হয়নি।


বিবার্তা/কাশেম/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com