শিরোনাম
উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে দূষণ রোধ করতে হবে
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৭
উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে দূষণ রোধ করতে হবে
বাণিজ্য ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে এখনই বিশেষ করে শহর এলাকায় পরিবেশগত অবনতি ও দূষণ রোধে কাজ করতে হবে।


আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পরিবেশ দূষণের কারণে কেবল শহরগুলোতে সাড়ে ৬০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। শহরগুলোতে দূষণ মারাত্বক পর্যায়ে পৌঁছেছে। শহরে পরিবেশ দূষণজনিত রোগে বছরে ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বছরে ২৮ শতাংশ মৃত্যু পরিবেশ দূষণজনিত কারণে হয়ে থাকে, যেখানে পরিবেশ দূষণে বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ১৬ শতাংশ।


ঢাকায় একটি পাঁচতারকা হোটেলে ‘বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশগত অভিযোজন বৃদ্ধিকল্পে সুযোগ সম্প্রসারণ: দেশভিত্তিক পরিবেশগত পর্যালোচনা, ২০১৮’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।


এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচিব আব্দুল্লাহ আল মহসীন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার এবং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার কেসেনিয়া লভভস্কি বক্তব্য রাখেন।



আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পরিবেশ দূষণজনিত রোধে বাংলাদেশ বিগত এক দশকে নীতি ও আইনগত কাঠামোর অনেক উন্নতি করেছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা ইটের ভাটা এবং অন্যান্য দূষণকারী শিল্পগুলোতে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি চালু করেছি এবং প্রধান নগরগুলোতে নিরবিচ্ছন্নভাবে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি।


পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দূষণ রোধ কার্যক্রম আগের থেকে অনেক বেশি এগিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুষায়ী পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন পরিবেশ আইন-২০১৮ এর খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে।


অনুষ্ঠানে রাজশ্রী পারালকার বলেন, নগর এলাকায় পরিবেশ অবনতি ও দূষণের কারণে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য সঠিক নীতি ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান থাকা এবং শিল্পকারখানায় পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এখনই জোরালো পদক্ষেপ থাকা দরকার।


প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলাভূমি দখল ও বিপজ্জনক বর্জ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলার পাশাপাশি দূষণ ও পরিবেশগত অবনতির ফলে নারী, শিশু ও দরিদ্রদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ,যাদের বেশিরভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী- তারা সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশ (আইকিউ) এবং স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে।


গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহত্তর ঢাকার ভারী ধাতব দূষিত স্থানগুলোর অধিকাশংই দরিদ্র এলাকাগুলোতে অবস্থিত।


প্রতিবেদনে তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে: পরিবেশগত অবনতির মূল্য, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই শহর এবং পরিচ্ছন্ন শিল্প প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ।


রিপোর্টে বলা হয়- এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়াও দেশে সবুজ অর্থায়ন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসার, বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতকরণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।



অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন বড় ও ছোট উভয় ধরণের নগরের ওপর প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, বিগত ৪০ বছরে ঢাকা প্রায় ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। জলাভূমি ভরাট করে বিভিন্ন এলাকার বহুতল বাড়ি বানানোর কারণে নগরের বিভিন্ন অংশ বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছোট ছোট নগরগুলো পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। যেমন ১৯৯০ সাল থেকে পাবনা তার অর্ধেক জলাভূমি হারিয়েছে এবং এর ইছামতি নদী মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে।


অবৈধ দখল রোধ এবং জলাভূমি ও খালগুলোতে বিনিয়োগ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা ও অন্যান্য নগরসমূহকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com