শিরোনাম
ঘাটতি নেই, তবু কেন রমজানে দাম বাড়ে?
প্রকাশ : ২০ মে ২০১৮, ১৬:০০
ঘাটতি নেই, তবু কেন রমজানে দাম বাড়ে?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রোজার কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যসহ কাঁচা সবজির বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে দাম বেড়েছে মাছ ও মুরগির। দাম বেড়েছে ছোলাসহ ডাল জাতীয় ভোগ্যপণ্যের। গরুর মাংসের দাম বেঁধে দেয়া হলেও অসৎ ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম নিচ্ছে।


রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এবার রমজানে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানী করা এবং দেশে উৎপাদিত পণ্য - সবকিছুর সরবরাহ পর্যাপ্ত।''


তারপরও দাম বাড়ছে কেন রমজানে? জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘রোজার মাসে ভোগ্যপণ্য কেনার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তিন মাসে যা কেনেনি তা একমাসে কিনতে চায় সাধারণ মানুষ৷ কেউ পুরো মাসের বাজার একসঙ্গে করছে, কেউ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিনছে। আবার সাধারণ মাসের চেয়ে রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের ব্যবহারও বেশি হয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে এবার পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি।''


ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি নেসার উদ্দিন জানান, ‘‘এবার নতুন করে ডাল আমদনি করতে হয়নি। আমরা গত বছর যে বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি করেছি তা থেকেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যানজট। আমাদের চট্টগ্রাম থেকে ডাল ঢাকায় আনতে হয়। রোজার কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট শুরু হয়েছে। ফলে পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার রোজায় দাম তেমন বাড়েনি।''


ঢাকার হাতিরপুল বাজারের সবজি-বিক্রেতা রহমত আলী বলেন, ‘‘রোজার সময় সবাই কম-বেশি বাজার করে। এর ফলে এ সময় সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর চাহিদা বাড়লে বাড়ে পণ্যের দাম। আমরা সারা বছর যা বিক্রি করি তার বড় একটি অংশ এই রমজান মাসে বিক্রি করি। মানুষ কেনেও বেশি, আর আমরাও এই সময়েই মূলত ব্যবসা করি।এ আর নতুন কী!''


ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী আলি হোসেন বলেন,‘‘ক্রেতার হাবভাব দেখে মনে হয়, বাজারে সব পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিনতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে। অনেক সময় ক্রেতারা দাম-দর জিজ্ঞেস না করেই অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্যের অর্ডার দিতে থাকে। এক কেজির স্থলে দুই কেজি, দুই কেজির স্থলে ৫ কেজি, ৪ কেজির স্থলে ১০ কেজি পণ্য কেনে। এতে বাজারে একটু চাপ পড়ে। এ কারণেই অনেক সময় সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়, আর এই সুযোগটি গ্রহণ করে ব্যবসায়ীরা।''


সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের একটি শক্ত সিন্ডিকেট আছে আমাদের দেশে। তারা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য শুধু রোজা নয়, বিভিন্ন সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কম হলেও আমাদের এখানে বেশি। আর দেশীয় ভোগ্যপণ্যে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফার জন্য রমাজানে চাহিদার দিকে খেয়াল করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ভারতে পিঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১২ রুপি আর সেই পিঁয়াজ আমাদের এখানে ৩৫-৪০ টাকা কেজি। এটা কিভাবে হয়?''


‘মনিটরিং টিম ঠিকমতো কাজ করছে বলে মনে হয় না’


এদিকে সরকারের নির্দেশ অনুসারে বাজারের প্রবেশমুখে নিত্যপণ্যের দর টানিয়ে রাখার বিধান থাকলেও তা মানছেন না কেউই। যেমন, সিটি কর্পোরেশন গরুর মাংসের দাম ঠিক করে দিয়েছে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। কিন্তু ৫০০ টাকার কমে তা পাওয়া যাচ্ছে না।


রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার সামলাতে আছে সরকারের ১১ সংস্থা। এই ১১ সংস্থার প্রায় ৩০-৩৫টি টিমের বাজার মনিটর করার কথা। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, এসব সংস্থার নির্দেশ অনেকেই মানছে না। কখন কোন সংস্থা কোন নির্দেশ দিচ্ছে, তা কে মানছে আর কে মানছে না, তা তদারকিরও কেউ নেই।


বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন। এর বাইরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করার কথা। একইসঙ্গে বাজারে আগে থেকেই কাজ করছে সরকারের চারটি গোয়েন্দা সংস্থা। বাজারে মূল্য পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ৫টি নিত্যপণ্য (মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, চিনি, খেজুর ও ছোলা) অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি করছে টিসিবি।


খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘এই মনিটরিং টিমগুলো ঠিকমতো কাজ করছে বলে মনে হয় না। বাজারে তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি দরকার। আগে দাম বেশি নেয়ায় বিক্রেতাদের শাস্তির আওতায়ও আনতে দেখেছি। এখন আর সেরকম হচ্ছে না। এসব দৃশ্যমান তৎপরতা অব্যাহত থাকলে অযথা দাম বাড়ানোর প্রবণতা কমবে।''


তিনি আরো বলেন, ‘‘টিসিবি'র মাধ্যমে কিছু পণ্য বাজারে ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে আসলে কোনো ফল আসবে না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই পণ্যের দাম ঠিক করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দূর করতে হবে।''


‘ইসলাম এই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে’


ইসলামি বিশ্লেষক মুফতি নুসরাতুল্লাহ কাশেমি বলেন, ‘‘পুঁজিবাদী মানসিকতার কারণে একটি গোষ্ঠী রোজার মাসে মানুষকে জিম্মি করে, সিন্ডিকেট করে অতিরিক্তি মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করে। আমরা এটা অনেক দিন ধরেই দেখে আসছি। কিন্তু ইসলাম এই সিন্ডিকেট ও পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে। মুসলমান হিসেবে আমাদের এই মানসিকতা পরিত্যাগ করা উচিত।'' সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com