শিরোনাম
রমজানে বাজার পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী
প্রকাশ : ১৮ মে ২০১৮, ১১:৩১
রমজানে বাজার পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র রমজানে বাজার পরিস্থিতি থাকে ঊর্ধ্বমুখী। রমজান আসলেই খরচ বেড়ে যায় সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে প্রতি বছর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। অনেক সময় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেকে প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।


অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান শুরুর অনেক আগে থেকেই খাদ্য মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। রমজানের সময় চিনি, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয় এবং তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।


বর্তমানে বাজারে চিনির মূল্য ৬০, পেয়াজের মূল্য ৫০, বেগুনের মূল্য ৭০, আলুর মূল্য ২৩, ধুন্দলের মূল্য ৬০, টমেটোর মূল্য ৬০, বরবটির মূল্য ৭০, ছোলার বুটের মূল্য ৮০, ডালের মূল্য ৭০, বেসনের মূল্য ১২০, পটলের মূল্য ৫০ টাকা। এছাড়া সবধরনের সবজির মূল্য বাড়তি।


কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, আলু ২০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৪০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা এক আঁটি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ধনিয়াপাতা ১৫০ টাকা কেজি, কাচা কলা হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাউ প্রতিপিস ৭০ টাকা, এছাড়া কচুর ছড়া ৪০ টাকা, লেবু হালি ৪০ টাকা। বুট কেজি ৮০ টাকা, ইসব গুলের ভুষি ৪০০ টাকা কেজি।


এদিকে কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকার রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি।


মাংস বিক্রিতেও মানা হচ্ছে না মূল্য তালিকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রোজা উপলক্ষে গরুর মাংসের দর প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা বিক্রেতারা মাংস বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা দরে। যা কয়েক দিন আগের তুলনায় ২০ টাকা বেশি। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ক্রেতারা।


দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ এমনিতেই দিশাহারা। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত সবাই এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে; তার ওপর রমজান এলে এ মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ভেজাল খাদ্যের রমরমা ব্যবসা।


পাইকারি থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই একযোগে অর্থ উপার্জনের মাস হিসেবে রমজানকে বেছে নেয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন যারা রমজান মাসে এতো বেশি লাভ করেন যা গোটা বছরের তুলনায় বেশি।


শুক্রবার রাজধানীর হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, মিরপুর ১, ২, ১০, আগারগাঁও, ফারমগেইট কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য পরিবহনের সমস্যা এখন প্রকট। এছাড়া এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটও পণ্য পরিবহনে প্রভাব ফেলেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের পর বাজারজাত করা পর্যন্ত পণ্যভেদে প্রতি কেজিতে বাড়তি খরচ পড়ছে ৩ থেকে ৫ টাকা।


ভোক্তারা বলেছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার পেছনে বড় কারণ কতিপয় ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার চিন্তা। এর বাইরে রয়েছে সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা।


পেঁয়াজ ছাড়া নিত্যপণ্যের বড় অংশই আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আবার চিনি ও ভোজ্যতেল ছাড়া রোজার পণ্যের সিংহভাগ কনটেইনারে করে বিদেশ থেকে আনা হয়। প্রতিবছর রোজার আগে মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল বেড়ে যায়। এবার মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করায় গাড়ির চাহিদা দেড়গুণ বেড়েছে। এখন ছয় চাকার গাড়িতে (ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান) ১৩ টন পণ্য পরিবহন করা হয়। আগে কমবেশি ২০ টন পণ্য পরিবহন করা যেতো।


ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন যানজটের কারণে এখনো আটকে আছে পণ্যদ্রব্য। তারা বলছেন, আগে যেখানে ৪০ টন পণ্য পরিবহনের জন্য দুটি গাড়ির প্রয়োজন হতো, এখন একই পণ্য পরিবহনে তিনটি গাড়ির দরকার হচ্ছে। গাড়ির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি মহাসড়কের ফেনী অংশে যানজটের কারণে এক সপ্তাহ ধরে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত সময় লাগছে। চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি না পাওয়ায় পণ্য পরিবহনও কমে গেছে।


চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র খাতুনগঞ্জের কিং ট্রেডার্সের কর্ণধার পরিতোষ দে বলেন, ছয়টি গাড়ির দরকার হলে পাওয়া যাচ্ছে দুটি গাড়ি। ভাড়াও বেশি। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কেজি প্রতি ৬৭-৬৮ টাকার দেশি মসুর ডাল খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৭৩-৭৪ টাকায়।


পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আন্তজেলা পরিবহন সংস্থা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউর রহমান বলেন, গত শনিবার চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী পাঁচটি গাড়ি সোমবার রাতে ঢাকার মিরপুরে পৌঁছায়, যেখানে আগে ৬-৮ ঘণ্টা লাগত। যানজটের কারণে প্রতি ট্রাকের ভাড়া (ঢাকা-চট্টগ্রাম) পাঁচ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। এপ্রিল মাসে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ২৪-২৬ হাজার টাকা। ১০ দিন ধরে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩২ হাজার টাকা।


রোজায় নিত্যপণ্যের চাহিদা ও আমদানি


রোজায় ছোলার চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টন। গত ৪ মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার টন। খেজুরের চাহিদা থাকে ১৫ হাজার টন। গত ৪ মাসে এসেছে প্রায় ৪৩ হাজার টন। রোজায় ভোজ্যতেল দরকার হয় প্রায় আড়াই লাখ টন। শুধু এপ্রিলেই বাজারজাত হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার টন। রোজায় মসুর ও মটর ডালের চাহিদা থাকে ৪০ হাজার টন। এ দুটো পণ্যও পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। চিনির চাহিদা আড়াই থেকে তিন লাখ টন। এর মধ্যে শুধু গত মাসে বাজারজাত হয়েছে আড়াই লাখ টন। এই তথ্য চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া।


আটকে আছে রোজার পণ্য


কনটেইনারে আসা রোজার অনেক পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে। বন্দরের হিসাবে বেসরকারি ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হবে, এমন পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা এখন সাড়ে তিন হাজার। এসব কনটেইনারে মসুর ডাল, ছোলা, মটর ডালসহ ৩৭ ধরনের পণ্য রয়েছে।


বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেসরকারি ১৭টি ডিপোতে চাহিদানুযায়ী যন্ত্রপাতি সংকট আছে কি না, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, ১৭টি ডিপোতে ৭০টি কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি এবং ৫৭টি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর যন্ত্র কম আছে। গাড়ি ও যন্ত্রপাতি কম থাকায় বন্দর চত্বরে ডিপোগামী কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে।


চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, তারা হিসাব করে দেখেছেন বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছাতে এখন কেজিপ্রতি বাড়তি চার-পাঁচ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সরবরাহ-ব্যবস্থায় গতি ফেরানো না গেলে এই বাড়তি খরচ ভোক্তাদের গুনতে হবে।


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com