শিরোনাম
বড় ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংক
প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৮, ১৮:৫৮
বড় ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংক
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ৫৭ শতাংশই বড় ঋণে চলে যাচ্ছে। ঝুঁকি জেনেও এসব ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। গত কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ঝুঁকির মুখে রয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত।


মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসে ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।


বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশ বড় ঋণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭৩ শতাংশ বড় ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ ছিল বড় ঋণ। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে।


কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।


ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই বিশেষ সজাগ। এর পরও খেলাপি ঋণসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ আর্থিক অনিয়ম ঠেকাতে নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমাতে বেশ কিছু পদেক্ষপ নিয়েছে।


কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল।


ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি বলেন, ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ সীমা এবং বড় ঋণের বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের গুণগত মান উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে।


বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, গ্রামের মানুষ কম ঋণ পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে।


পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কোনো ঋণ খেলাপি হবে না। এতে খেলাপি ঋণ অনেকাংশে কমে যাবে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি রেখে বিভিন্ন দেশে অনেকে বিজনেস ক্লাসে ঘুরে বেড়ায়। নির্দিষ্ট এলাকায় ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। আবার একইভাবে নির্দিষ্ট লোককে ঋণ দিচ্ছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কিছু ধূর্ত লোক একই সম্পত্তি বার বার দেখিয়ে ঋণ নেয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিআইবির মতো পর্যায়ে যায়নি। বিষয়টি এখন নজর দেয়ার সময় এসেছে।


সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের ছয় মাসের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখতে হবে। খেলাপি ঋণ মনিটরিং-এ ডাটা ব্যাংক করতে হবে। গৃহ ঋণের বিষয়ে বিশেষ সর্তক হতে হবে। কেননা আইনজীবীরা জমি সংক্রান্ত অনেক তথ্য দেয় যা সঠিক নয়। অবশ্যই সরেজমিন পরিদর্শন করে ঋণ দিতে হবে।


ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ব্যাংক জনগণের অর্থ অন্যদের ঋণ দেয়। এ কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা কারখানা বানালো না দামি পাজেরো জিপ কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা ব্যাংককে নজরদারী করতে হবে।


এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, সবগুলো ব্যাংক খেলাপি কমানোর চেষ্টা করছে। তবে গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে না। এ জন্য ব্যাংক ঋণের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।


কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিস থেকে অংশগ্রহণ করেন রাজশাহীর বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক পর্যায়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com