শিরোনাম
নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪,৩৬০ কোটি টাকা
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:০৬
নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪,৩৬০ কোটি টাকা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঋণ পুনর্গঠন ও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের পরও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকখাতে শ্রেণীকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫,৭৩১ কোটি টাকা, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৫১,৩৭১ কোটি টাকা। নয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ১৪,৩৬০ কোটি টাকা বা ২৮ শতাংশ বেড়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুযারি-মার্চ) শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯,৪১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে সেটা ৩,৯৫৪ কোটি টাকা বেড়ে ৬৩,৩৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সেটা আরো ২,৩৬৬ কোটি টাকা বেড়ে ৬৫,৭৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।


আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট (বিডিবিএল) ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ২৯,৯৫৬ কোটি টাকা, গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ২৩,৭৪৫ কোটি টাকা। নয় মাসে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬,২১১ কোটি টাকা। জুন শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২৫,৩১৫ কোটি টাকা।


আর সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫,৮১৭ কোটি টাকা। নয় মাস আগে এ দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪,৯৬৭ কোটি টাকা।


এসময়ে বেসরকারি ৩৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭,৬৮৯ কোটি টাকা, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ২০,৭৬০ কোটি টাকা। নয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬,৯২৯ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক জুন শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২৫,৩১৫ কোটি টাকা।


অন্যদিকে বিদেশি মালিকানার নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে ২,২৬৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, ২০১৫ সাল শেষে যা ছিল ১,৮৯৭ কোটি টাকা। নয় মাসে বিদেশি এসব ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ বেড়েছে ৩৭২ কোটি টাকা।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, সাধারণত প্রতিবছর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়ে থাকে। ডিসেম্বরে গিয়ে পরিস্থিতি আবার কিছুটা উন্নতি হয়। তবে যেভাবে বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিলো, বেড়েছে সে তুলনায় কম। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদারের ফলে নতুনভাবে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমায় এমন হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের মাধ্যমে পরিস্থিতির আরও উন্নতি করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ওই ব্যাংকের জন্য অগ্রিম সতর্কবার্তা। খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। ঋণ খেলাপির পরিমাণ সেক্ষেত্রে বেশি হয়। কোনো ঋণ দুই বছর বা তার বেশি সময় আদায় না হলে ধরে নেয়া হয় ঋণটিতে বড় কোনো সমস্যা আছে। হয় ঋণ বেনামি, না হয় ঋণগ্রহীতা উধাও বা তিনি কোনো ব্যবসা করছেন না। ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সময় যদি যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় রাখত, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না। কিন্তু পরিচালনায় কিছু সমস্যা বা পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকগুলো তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ কারণেই খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ শ্রেণীকরণের তিনটি পর্যায় রয়েছে। তা হলো নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতি। এই তিনটি পর্যায় বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন, ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে হলে সন্দেহজনক ঋণ, যার বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন এবং ৯ মাসের বেশি হলে তাকে মন্দ বা ক্ষতি মানে বিবেচনা করা হচ্ছে, এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com