জানুয়ারির তুলনায় অক্টোবরে দ্রব্যের মূল্য ৭৬.৩৭ শতাংশ বেড়েছে। দেশে সরকার থাকলেও নাগরিকদের জন্য ভাবার কেউ নেই।
মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদের কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত “বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি ও বর্তমান নাগরিক জীবনে এর প্রভাব” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদের ভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরু, গণস্বাস্থ্যের পরিচালক ডা.নাজিম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আলাউদ্দিন পিকে, কর্মসংস্থান আন্দোলনের সভাপতি মো.দেলোয়ার হোসেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদখান, মোস্তফা বাদল, মো.কামরুল আহসান প্রমুখ।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “দেশে সরকার থাকলেও নাগরিকদের ভাবার কোন ব্যক্তি নেই। আজ প্রত্যেকটি নাগরিকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। জীবন চলছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দোয়ায়। আর বিদ্যুৎ খাতকে ভারত নির্ভর করার অপচেষ্টা চলছে।” তাই বিদ্যুতকে ভারত-নির্ভর না করে দেশের জনগণের কল্যাণে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানান তিনি।
সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “বিদ্যুতের গণশুনানীতে আমরা অনেক যুক্তি উপস্থাপন করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে বিদ্যুতের মূল্য না বৃদ্ধি করে মূল্য কমানো যায়। বিদ্যুতের এক পয়সা দাম বৃদ্ধি করলে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “সিষ্টেম লসের নামে দুর্নীতি এবং সরকারের ভুলনীতি পরিহার করলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তো প্রয়োজনই নেই বরং দাম কমানো সম্ভব। রেন্টাল, কুইক রেন্টালের নামে অধিক দামে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করলে, ডিজেল, ফার্নেস অয়েলের মূল্য সমন্বয় করলে ৭৮৪৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১.৫৬ পয়সা কমানো সম্ভব। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাপনের সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জনগণের দায়িত্ব।”
সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে সেবা খাতসমূহকে আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে বর্তমানে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এই খাতে ঘাটতি, সিস্টেম লস, বিগত দিনের ভর্তুকির অর্থ, ঋনের লাভসহ সব কিছুই জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত বৎসর সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে যার ফলে নাগরিকের জীবনে সর্বক্ষেত্রে ব্যয়ভার বৃদ্ধি হতে শুরু করে। চলতি বৎসর জানুয়ারি থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি হতে শুরু করে। এতে করে মার্চ পর্যন্ত ব্যয়ভার বৃদ্ধি পায় ২০ শতাংশ।এর পর হাওর বিলিন, পাহাড় ধস অতিবর্ষণ, অকাল বন্যা, সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট মিলিয়ে আরেক দফা পণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মূল্যস্ফিতি বৃদ্ধি পেলে নাগরিক জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। এতো কিছুর পরেও গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উপর গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আমরা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের স্বার্থব্যবসা বাণিজ্য, উৎপাদন ও রপ্তানী সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থে এই মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা মূল্যবৃদ্ধি না করে উল্টো কমানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছি।’’
মহিউদ্দীন বলেন, “একটি ছোট পরিবারের মাসিক খরচ হিসাব করলে দেখা যায় জানুয়ারির চাইতে চলতি মাসে তার অতিরিক্ত খরচ দাঁড়ায় ৪৮৪০ টাকা যা শতকরা হিসাবে +৫৬.৩৭%। সেই সাথে আপ্যায়ন, পরিবহন, বাড়িভাড়া, বিনোদন, পানি, গ্যাস, টেলিকম, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, আসবাবপত্র, অলংকার ও ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স এর অতিরিক্ত মূল্য যোগ করলে দেখা যাবে এ সকল খাতেও ব্যয় বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সর্বোমোট ৭৬.৩৭ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ আয় সেই হারে বৃদ্ধি পায়নি। নতুন করে যদি আবারো বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তাহলে আবারো চক্র-বৃদ্ধি হারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হবে। এতে করে নাগরিক জীবনে চরম অশান্তি বিরাজ করবে।’’
বক্তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি না করে কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/ইমরান
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]