শিরোনাম
বিপর্যস্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৮
বিপর্যস্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

উচ্চ পরিচালনব্যয়, লাগামছাড়া খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতিসহ অব্যাহত লোকসানে বিপর্যস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এমন অবস্থায় ৭০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থসংস্থান ঋণের বিপরীতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দিতে অর্থমন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছে রাকাব। তবে গ্যারান্টি দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছে অর্থবিভাগ।


রাকাব নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংকটি সামান্য মুনাফা করলেও সার্বিকভাবে আর্থিক কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক নয়। ব্যাংকের খোলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় মুনাফার বড় অংশ সংস্থান বাবদ রাখতে হয়। পাশপাশি ব্যাংকের উচ্চ পরিচালনগত ব্যয় ব্যবস্থাপনা-অদক্ষতারই প্রমাণ বলে মনে করে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যাংকের ব্যবসায়িক পরিসর বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং অধিক দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য একটি সমন্বিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর করার শর্ত দিয়েছে অর্থবিভাগ।


পর্যবেক্ষণে আরো দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলোতে ক্রমাবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে মূলধন ও প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকসমূহের মূলধন সংরক্ষণে বর্তমানে অনুসৃত আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি-পদ্ধতি ‘ব্যাসেল-২' অনুযায়ী পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে না রাকাব। বর্তমানে ব্যাংকটির ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ ৩,৮৫৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পুঞ্জিভূত লোকসান ১,০৭২ কোটি টাকা ধরে ঘাটতি মূলধনের পরিমাণ ৭৬১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে পুঞ্জীভূত ক্ষতি ও অন্যান্য সমন্বয়যোগ্য উপাদান বাবদ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫১৩ কোটি টাকা নিট লোকসানের বিপরীতে পরের অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করপরবর্তী মুনাফা করেছে।


ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ৩,৬৩৫ কোটি টাকা নিয়েছে। এ ঋণের উপর সুদসহ মোট ৪,৬৪১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ২০০৯-১০ ও ২০১১-১২ অর্থবছরের ঋণ রাকাব সময়মতো শোধ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের প্রদেয় মুনাফা থেকে যথাক্রমে ১৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং ২৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা করে মোট ৪৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কেটে সমন্বয় করা হয়। ফলে রাকাব প্রকৃতপক্ষে পরিশোধ করেছে ৪,১৬৯ কোটি টাকা।


অর্থবিভাগ বলছে, বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকটি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, বিশেষ করে কৃষি খাতে বিনিয়োগ ও কৃষি ভর্তুকি বিতরণসহ অন্য কার্যক্রমগুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয় বিধায় অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। ফলে ব্যাংকটির প্রতিযোগিতাসক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যাংকিং খাতের বর্তমান প্রতিযোগিতায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৭০০ কোটি টাকা গ্যারান্টি দেয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি দেয়া হলেও প্রতিটি কিস্তি পরিশোধের সাথে সাথে এবং ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে জানাতে শর্ত দেয় অর্থমন্ত্রণালয়।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে। কারণ, ব্যাংকের পরিষদ থেকে শুরু করে শাখার কর্মকর্তা পর্যায়েও বিস্তার ঘটেছে দুর্নীতির। এমনকি ব্যাংকের কর্মী নিয়োগ নিয়েও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ও শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে ব্যবস্থাপনা জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে উপর থেকে নিচের দিকে শৃংখলাব্যবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংক পরিচালনায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সেটা না হলে নিকট ভবিষ্যতে ব্যাংকটি পরিচালনায় আরো সংকট তৈরি হবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com