শিরোনাম
১৬.৩% ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরে মুদ্রানীতি ঘোষণা
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৩:৫১
১৬.৩% ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরে মুদ্রানীতি ঘোষণা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি অর্থবছরে সরকার প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।


বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ফজলে কবির এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।


বিগত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে নতুন মুদ্রানীতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিকে তারা বলছে স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান সহায়ক প্রবৃদ্ধি নীতি।


সরকারের নির্ধারিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন প্রাক্কলন করা হয়।


গভর্নর বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি গতিশীল রেখেও (বার্ষিক ১৬.৫ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমার বিপরীতে মে ২০১৭ নাগাদ ১৬.০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত উর্ধসীমার অনেকটা নিচে থেকেছে। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধি না পেয়ে বরং কমে যাওয়া (১৬.১ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বসীমার বিপরীতে মে ২০১৭ নাগাদ ১৬.২ শতাংশ হ্রাস)। আর সঞ্চয়পত্রগুলোর বিক্রির সূত্রের সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ কমে গেছে।


তিনি বলেন, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স নিম্নগামী ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কম থাকায় (মে ২০১৭ নাগাদ ১৪.৫ শতাংশ রেমিট্যান্স হ্রাস এবং ১.৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি) বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি খাত উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।


চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।


ফলে নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণের ১৫.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সংকুলান ধরা হয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি ও সরকারি খাতের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন যথাক্রমে ১৬.৩ ও ১২.১ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের জন্য ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন দাঁড়িয়েছে ১৩.৯ শতাংশ; এবং রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি গড় বার্ষিক ১২.০ শতাংশে পরিমিত রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির ওপর নিয়ন্ত্রণ সুষ্ঠুতর করার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো ২০১৮ অর্থবছর থেকে রিজার্ভ মুদ্রা প্রবৃদ্ধির পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে গড় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করা হবে।


নতুন মুদ্রানীতিতে রেপো, রিভার্স রেপো নীতি সুদহারগুলো আপাতত পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলে গভর্নর উল্লেখ করেন। তবে প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবেই নীতি সুদহারগুলোয় পরিবর্তন আনা যাবে।


নতুন মুদ্রানীতির সফল বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকির দুটি দিক উল্লেখ করেছেন গভর্নর। প্রথমত, সঞ্চয়পত্রগুলোর বাজার সুদহারের সঙ্গে সঙ্গতিহীন উচ্চ মুনাফা হার সরকারের জন্য অতিরিক্ত সুদ ব্যয়ভার সৃষ্টি ছাড়াও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সরকারী বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বন্ড বাজারের বিকাশ বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। অচিরে সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফা হার বিদ্যমান বাজার সুদহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার কথা মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।


দ্বিতীয়ত : প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স অন্ত:প্রবাহে নিম্নগতি শুধুমাত্র বিদেশে শ্রমবাজারে চাহিদা হ্রাসের কারণে নয়; বিদেশী কর্মীদের আয় প্রত্যাবাসনের ওপর মধ্যপ্রাচ্যে রেমিট্যান্সের উৎস দেশগুলোয় নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা আরোপের কারণে এবং অগখ-ঈঋঞ বিধি-ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে ব্যাংকগুলোর ওপর মাত্রাতিরিক্ত কঠোরতার সঙ্গে প্রয়োগের কারণেও এটি ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিককালে অগখ-ঈঋঞ বিধি-ব্যবস্থা পরিপালনে বিচ্যুতির জন্য বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্যাংক উন্নত বিশ্বে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষদের দ্বারা বিপুল অংকের অর্থদন্ডে দন্ডিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে এ সকল ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোয় অধিকাংশ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নেয়, ফলে বাংলাদেশীসহ বিদেশী কর্মজীবীদের জন্য বৈধ পথে দেশে অর্থ প্রেরণ দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টির সঠিক সমাধানের বাংলাদেশসহ এগমন্ড/এপিজে গ্রুপের অন্যান্য সদস্য দেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে (যেমন-ব্যাসেল ভিত্তিক ঋঝই, এ-২০) সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। রেমিট্যান্সের অন্ত:প্রবাহ প্রবৃদ্ধি ধারায় ফেরাবার বিভিন্নমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে বৈধ চ্যানেলে নিরাপদ ও দ্রুততার সাথে রেমিট্যান্স আনয়নে আরও উদ্যোগী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান ও এস কে সুর চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমি, প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ, প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


বিবার্তা/মৌসুমী/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com