ব্যাংকে টাকা রাখলে আকর্ষণীয় মুনাফা পাচ্ছেন না গ্রাহক। কারণ, ক্রমান্বয়ে কমছে সুদহার। অর্থাৎ মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে আমানতের সুদ।
ব্যবসা মন্দার অজুহাত দেখিয়ে মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক। এমন অবস্থায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে গ্রাহকের মুখ ফিরিয়ে নেয়াটাই স্বাভাবিক! অথচ বিস্ময়করভাবে চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। ব্যাংকব্যবস্থার প্রতি এখনও যেন কমেনি গ্রাহকের আস্থা। গত অর্থবছর শেষে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ। দেশে ৫৭টি তফসিলী ব্যাংকে থাকা এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৪ কোটি ২৮ লাখ। যা মোট অ্যাকাউন্টের ৫৪ শতাংশ।
তবে পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮৭ লাখ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ২ কোটি এক লাখ বা ৩৪.২৪ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকিং সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নেয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। ১০ টাকা হলেই এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব। গ্রাম বা শহরের নিম্ন আয়ের সাধারণ কৃষক-শ্রমিক দরিদ্র মানুষও এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে পারছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এক সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশ ব্যাংকব্যবস্থার জটিল হিসাব থেকে দূরে থাকতো। তবে, এখন অ্যাকাউন্ট খোলা, অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সহজ প্রক্রিয়ার কারণে অংশগ্রহণ বাড়ছে। এছাড়া লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় সুদহার কমার পরও বাড়ছে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮৭ লাখ। ২০১৩ সালে সেটা বেড়ে হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ। ২০১৪ সালে আরও বেড়ে ৬ কোটি ৯৪ লাখে দাঁড়ায়। এরপরের বছর ২০১৫ সাল শেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭ কোটি ৬২ লাখ এবং ২০১৬ শেষে সেটা সামান্য বেড়ে হয় ৭ কোটি ৮৮ লাখ।
গত বছর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট (বিডিবিএল) ব্যাংকে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ। আর বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এক কোটি ৮ লাখ। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকে রয়েছে ৩ কোটি ৫৭ লাখ অ্যাকাউন্ট। আর বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা তিন লাখ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক অন্তর্ভূক্তিমূলক নানা কার্যক্রমে অংশ নিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিই অ্যাকাউন্ট বাড়ার অন্যতম কারণ।
অন্যদিকে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে অন্য তেমন নিরাপদ বিকল্প না থাকায় ব্যাংকব্যবস্থায় আস্থা রাখছে গ্রাহক।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা আগের চেযে আরো বেড়েছে। কারণ, দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি, কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ধরা পড়ায় এখন আর কেউ এ ধরনের আর্থিক বিনিয়োগে উৎসাহী হচ্ছেন না। এর আগে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকেই নানা প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি শেয়ার বাজার ব্যবসাও আগের অবস্থানে নেই। অনেকে শেয়ার ব্যবসায় নিজেদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তারাও তাদের অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখছেন। এ কারণে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে টাকা নিরাপদে রাখাটাকে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন অনেকে। এসব বিভিন্ন কারণ ব্যাংকে হিসাব বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের প্রসারের কারণে দ্রুত লেনদেনের সুবিধা বেড়েছে, এ কারণেও বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক নতুন গ্রাহকের আগমন ঘটছে, যারা নতুন হিসাব খোলার মাধ্যমে নিয়মিত লেনদেন করছেন। আর বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দ্রুত সব শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এভাবেও ব্যাংকগুলোতে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়ার মাধ্যমে আমানতের পরিমাণ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে ব্যাংকে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে তৎপর। বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিযোগিতার কারণেও ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান। ফলে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়ছে।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]