শিরোনাম
রেলওয়ের পণ্য পরিবহন সীমিত হয়ে গেছে
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৫৯
রেলওয়ের পণ্য পরিবহন সীমিত হয়ে গেছে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্য পরিবহণে আইটেমের সংখ্যা নানা কারণে এখন সীমিত হয়ে গেছে। মূলত কন্টেইনার ও জ্বালানি পণ্য পরিবহণ করছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। পরিকল্পনার অভাব ও কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে রেলের পণ্য পরিবহন বৈচিত্র্য কমে গেছে।


সূত্র মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও রেলপথে অর্ধশতাধিক পণ্য পরিবহন হতো। স্বাধীনতার পর দেশের সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপকভাবে। এর বিপরীতে রেলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ছিল ধীরগতি। ফলে পণ্য পরিবহনে রেলের ওপর আস্থা হারায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।


বর্তমানে রেলের পরিবহন আয়ের ৫৫ শতাংশই আসছে জ্বালানি ও কনটেইনার পরিবহন থেকে। সম্প্রতি রেলওয়ে কনটেইনার পরিবহনের কার্যকারিতা বাড়াতে আলাদা করপোরেশন গঠন করলেও রেলপথে বহুমুখী পণ্য পরিবহনে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। সড়কপথের তুলনায় রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হলেও সময়ানুবর্তিতার অভাব, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধীরগতির কারণে খাদ্যপণ্য পরিবহনেও রেলওয়ে পিছিয়ে পড়ছে।



রেল সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেলওয়ে পণ্য পরিবহন খাত থেকে আয় করে ১৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এ সময় পাট, চাল ও আখ পরিবহন থেকে আয় হয় মাত্র আট কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কৃষিজ পণ্য পরিবহনে অনীহার কারণে আগামীতে এসব পণ্য থেকে রেলের আয় আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে।


আগে রেলওয়ে সবচেয়ে বেশি গম, চাল ও পাট পরিবহন করলেও বর্তমানে সে স্থান দখল করেছে কনটেইনার ও জ্বালানি তেল। কয়েক বছর ধরে এ দুটি পণ্য থেকে সবচেয়ে বেশি পরিবহন আয় করেছে রেলওয়ে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেলের মোট পণ্য আমদানির সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল কনটেইনার। আর জ্বালানি তেল পরিবহন হয়েছে ১৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। বর্তমানে রেলের পণ্য পরিবহন আয়ে এ দুটির অংশ আরো বেড়ে ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।


পরিসংখ্যান মতে, একসময় রেলপথে কনটেইনারসহ অর্ধশতাধিক পণ্য পরিবহন হতো। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে রেলপথে কনটেইনার ছাড়াই ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার টন পণ্য পরিবহন হয়। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৫৬ হাজার টনে। পরের অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ৭১ হাজার টন। অর্থাত্ এ সময়ে রেলপথে ভোগ্যপণ্যসহ আনুষঙ্গিক পণ্য পরিবহন কমেছে ৬০ শতাংশ।


আগে রেলপথে নিয়মিত সিমেন্ট, কয়লা, তুলা ও তুলাবীজ, কাঠ, সার, ডালজাতীয় পণ্য, পশুখাদ্য, ইস্পাত, পাট, পাথর, তেলবীজ, ধান-চাল, লবণ, আখ-চিনি, চা, তামাক, গম ও সবজি পরিবহন হতো।


এদিকে রেলপথে কনটেইনার পরিবহনের কার্যকারিতা বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে কনটেইনার করপোরেশন অব বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বর্তমানে রেলওয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন তিন জোড়া কনটেইনারবাহী ট্রেন পরিচালনা করে।


করপোরেশনের মাধ্যমে রেলওয়ে প্রতিদিন চার জোড়া কনটেইনারবাহী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকন্দ্র ও শিল্পে ব্যবহারের জ্বালানি পরিবহনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পণ্য পরিবহনে বৈচিত্র্য বাড়াতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর সঙ্গে রেলপথে পণ্য পরিবহনে সময়ানুবর্তিতার অভাব, দেশের শিল্পাঞ্চলকেন্দ্রিক রেলপথ বিলুপ্তি, কোচ-ইঞ্জিন সংকট তো রয়েছেই। ফলে রেলপথের পণ্য পরিবহন কনটেইনার ও জ্বালানি পরিবহনেই সীমিত হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


রেলপথে পণ্য পরিবহনে বৈচিত্র্য কমার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আবদুল হাই বলেন, একসময় রেলপথে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশও আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে কনটেইনার ও জ্বালানি পরিবহনের হার বাড়লেও অন্যান্য পণ্য পরিবহন দিন দিন কমছে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com