শিরোনাম
১২০ খেলাপীর হাতে ছয় ব্যাংকের ১০,০০০ কোটি টাকা
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:১৩
১২০ খেলাপীর হাতে ছয় ব্যাংকের ১০,০০০ কোটি টাকা
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

১২০ প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই নিয়ে রেখেছে ১২০ গ্রাহক। দীর্ঘ সময়েও ঋণ আদায় করতে না পেরে ঝুঁকিতে রয়েছে এসব ব্যাংক। আর তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দেয়া হচ্ছে সরকারি সহায়তা।


অর্থমন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ২৭,৭৪২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ১২০ গ্রাহকের কাছে রয়েছে ৯,৯১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে মোট খেলাপির ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ।


প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান বড় অংকের খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী। আর এজন্য ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে অদক্ষতা ও অব্যবস্থপনা দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছে বিপুল টাকা আটকে পড়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগসক্ষমতা অনেকাংশেই কমে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৮,৯৩৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছেই রয়েছে ২,৮৩৪ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৩১.৭ শতাংশ।


অগ্রণী ব্যাংকের ৫,০৭০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১,৬১২ কোটি টাকা আটকে আছে, যা মোট খেলাপির ৩১.৮ শতাংশ।


শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে জনতা ব্যাংকের রয়েছে ১,৬৬২ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের ৪৮.৪ শতাংশ। গত বছর শেষে এ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৩,৪৩২ কোটি টাকা।


রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২,৭১৪ টাকা। আর শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির দখলে রয়েছে ১,৪৪৩ কোটি টাকা। এটা মোট খেলাপির ৫৩.২ শতাংশ।


বেসিক ব্যাংকের ৬,৯৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছেই রয়েছে ২,০০৫ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের ২৮.৯ শতাংশ।


আর বিডিবিএল ব্যাংকের ৬৫৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে রয়েছে ৩৫৯ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের ৩৫.৭ শতাংশ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া অধিকাংশই ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের কাছে ব্যাংকাররা জিম্মি হয়ে গেছে। তাদের থেকে ঋণ আদায় করা কঠিন। আইনের ফাঁক দিয়ে এসব ব্যক্তি বেরিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে নিয়োগ দিতে হবে। তা-না হলে এ অবস্থা থেকে বের হওয়া যাবে না।


পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। বড় বড় কিছু ঋণ রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন করার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে দুর্বল। আর রয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতা। কিছু অসৎ ব্যাংকার জেনে-বুঝে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঋণ দিচ্ছে। সোনালী ও বেসিকের ঋণ কেলেংকারি দেখে সেটা বোঝা যায়।


অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের তদারকির জন্য সরকার নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই ব্যাংকগুলোতে যাতে সুশাসন ফিরে আসে তার জন্য পরিচালনা পর্ষদে নতুন মুখ আনা হয়েছে। যে কোনো মূল্যে ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড ধরে রাখতে হবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com