শিরোনাম
লুকলুকির বাণিজ্যিক চাষ খুলবে সম্ভাবনার দ্বার
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০১৭, ০৯:৩১
লুকলুকির বাণিজ্যিক চাষ খুলবে সম্ভাবনার দ্বার
নুরুল করিম আরমান, লামা
প্রিন্ট অ-অ+

‘লুকলুকি’ মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে অনেকটা আঙ্গুর ফলের মত। এতে রয়েছে প্রচুর টসটসে পানি। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা’। বৈজ্ঞানিক নাম Fiacoartia Gargomaj. ইংরেজিতে একে বলে Coffee Plant. পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া এই ফল অন্য কোথাও তেমন একটা পাওয়া যায় না। পাকা পাইন্ন্যাগুলা ফল লাল টুকটুকে, তবে কিছুটা বেগুনি রঙ্গেরও ছোপ রয়েছে। কামড় দিলেই যেন রসে ভরা স্বাদ।


কেউ কেউ এটাকে টিপাফল নামে ডাকেন। বাংলাদেশে এটা অঞ্চলভেদে টিপফল, টিপটিপানি, লুকলুকি, পেলাগোটা, প্যালা, পায়েলা, ঝিটকি, পলাগোটা, টরফই, পানিয়ালা, পানি আমলা, পাইন্না, পাইন্যাগুলা, বেহুই ইত্যাদি নামেও পরিচিত।।


আঙ্গুর ফলের মতো এ ফলের বর্ণ ও আকার। ভেতরে ৫-৬টি খুবই ছোট বীজ থাকে। যে একবার এর স্বাদ নিয়েছে, তিনি বার বার খেতে চাইবেন। ছোট ছেলেমেয়ে ও মহিলাদের কাছে পাইন্ন্যাগুলা খুবই প্রিয় ফল। তবে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না থাকায় এ ফল গাছ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।


পার্বত্য অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে এখানের পতিত পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পাইন্ন্যাগুলা চাষ করা গেলে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন ‘সি’। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকরিতা বাড়ে এবং হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। এ গাছের শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। এর শিকড় দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে।



পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশের পাহাড়ি ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের গাছ জন্মায়। বছরের মে মাসের শুরুতে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাইন্ন্যাগুলা ফল পাকা শুরু হয়। তখন এখানের বিভিন্ন হাটবাজারে সচরাচর বিক্রি হয় এই ফল। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ফল চাষে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।


মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহ করে দেশের সমতল অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু বাগান মালিক নিজেরাই হাটবাজারে পাইন্ন্যাগুলা বিক্রি করেন। বর্তমানে এ ফল বাজারে প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


লামা পৌর এলাকার ফুটেরঝিরি, নয়াপাড়া, মধুঝিরি, সাবেক বিলছড়ি ও চেয়ারম্যান পাড়া বিভিন্ন পাহাড় সরেজমিন ঘুরে প্রায় অর্ধশত পাইন্ন্যাগুলা গাছ দেখা যায়। এছাড়া উপজেলার রুপসীপাড়া, গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ে সহস্রাধিক পাইন্ন্যাগুলা গাছে রয়েছে। এসব গাছে প্রচুর পাইন্ন্যাগুলা ধরে।


লামা বাজারের পাইন্ন্যাগুলা বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহীন জানান, গত ৮ বছর আগে পৌর এলাকার মধুঝিরিস্থ তার ফলদ বাগানের এক কোণে ১টি পাইন্ন্যাগুলা গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। গত মৌসুমে এ গাছে প্রায় দুই মণ পাইন্ন্যাগুলা ধরে। প্রতিকেজি ৯০টাকা হারে ৭ হাজার ২০০টাকায় বিক্রি করেছি। তিনি আরও বলেন, আম, জাম ও কাঁঠালের মতো পাইন্ন্যাগুলা ফলের গাছ দীর্ঘ মেয়াদী হয়। বীজ থেকে চারা জন্মে। কলমের মাধ্যমেও এর ফলের চারা উৎপাদন করা যায়।


লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরে আলম বলেন, লুকলুকি অর্থাৎ পাইন্ন্যাগুলা পাহাড়ি অঞ্চলেই জন্মে। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল। এর ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এখানের আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে এখানের পতিত পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পাইন্ন্যাগুলা চাষ করা গেলে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


বিবার্তা/আরমান/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com