শিরোনাম
লক্ষ্মীপুরে শত কোটি টাকার নারিকেলের ব্যবসা
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৭, ১০:৫০
লক্ষ্মীপুরে শত কোটি টাকার নারিকেলের ব্যবসা
বিবার্তা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে এবারও নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। নারিকেল কেনা-বেচায় এখন দারুণ সরগরম লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাটবাজার। চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে শত কোটি টাকার বেশি নারকেল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।


তবে স্থানীয়ভাবে নারকেলভিত্তিক কলকারখানা গড়ে না উঠায় ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষীরা।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় দুই হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে নারিকেল বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৫১০ হেক্টর, কমলনগর ৩৫০ হেক্টর, রায়পুর ৩৬৫ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে পাঁচ কোটি কোটি পিসেরও বেশি নারিকেল বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে যার বাজার দর শত কোটির টাকার বেশি। এছাড়াও দশ কোটি টাকার নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি হবে বলে আশা করে হচ্ছে।


জেলায় নারিকেলের প্রধান মোকামগুলো হলো সদর উপজেলার দালাল বাজার, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ শহর, কমলনগর হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার। এসব বাজারে এখন কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে নারিকেলের পাইকারসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এখানকার নারকেল বাগেরহাট, ভৈরব, খাদেমগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।


বাগানের মালিকরা জানান, নারিকেলের চারা গাছ রোপণের সময় প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়। প্রতিটি গাছ ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতি গাছে বছরে ২০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত নারিকেল পাওয়া যায়।


সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের আনোয়ার হোসেন নামে এক চাষী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম। এজন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও স্থানীয়ভাবে শিল্পকারখানা গড়ে না উঠাকে দায়ী করেন তিনি।


চন্দ্রগঞ্জ বাজারের নারিকেলের পাইকার কামাল হোসেন জানান, তিনি এ মৌসুমে হাজার পিচ নারিকেল ১৪ থেকে ১৮হাজার টাকা দরে এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার নারিকেল কিনেছেন। এগুলো কয়েকটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। তার মোকামে দশজন শ্রমিক নারিকেল ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এ বাজারে তার মতো আরও ৪জন পাইকার রয়েছেন। বর্তমানে মৌসুমের শুরু। তবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর নারিকেলের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।


দালাল বাজারের নারিকেল ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, বর্ষা মৌসুমের প্রতি সপ্তাহে দালাল বাজার থেকে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার নারিকেল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।


একই বাজারের ছোবড়া কারখানার মালিক আকরাম হোসেন জানান, এ শিল্পে তেমন কোন লোকসান নেই। বার মাস নারিকেলের ছোবড়ার চাহিদা রয়েছে।


নারিকেল শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ত্রিশ বছর যাবত তিনি নারিকেলের ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এক হাজার নারকেল ছোবড়া তুললে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পান। দৈনিক তিনি এক থেকে দেড় হাজার নারিকেলের ছোবড়া তুলতে পারেন।


লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতির সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু জানান, যেসব জেলায় নারিকেলভিত্তিক শিল্পকারখানা রয়েছে, সেখানে হাজার পিস নারকেল ২৫-৩০হাজার টাকা বিক্রি হলেও ওই পরিমাণ নারিকেল লক্ষ্মীপুরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪-১৮ হাজার টাকা। স্থানীয়ভাবে নারিকেলভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে হাজারো মানুষের কর্মস্থানের পাশাপাশি চাষীরা তাদের ন্যায্যমূল্য পেতেন। তিনি লক্ষ্মীপুরে নারিকেলভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য সরকার ও শিল্প উদ্যোগক্তাদের আহবান জানান।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে নারিকেলসমৃদ্ধ এ জেলায় নারিকেলভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে চাষীরা নায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি বিপুল মানুষের কর্মসস্থান হবে। সেজন্য এ জেলায় নারিকেলভিত্তিক কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com