শিরোনাম
হিজাব-বোরকার বাজার ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:০৫
হিজাব-বোরকার বাজার ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

হিজাব আর বোরকা ফ্যাশন ট্রেন্ড বিবেচিত হওয়ার পর এই দুটো ধর্মীয় পোশাকের বাজার এখন বেশ রমরমা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশে হিজাব ও বোরকার ব্যবসা বছরে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং এটা এখন দ্রুত বিকাশমান ব্যবসাগুলোর একটি। পাশাপাশি হিজাব ও বোরকার স্টাইলেও আসছে নতুনত্ব।


সব বয়সের নারী ও তরুণীরা হিজাব ও বোরকাকে আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করছে। তারা বলছেন, ধর্মীয় দিকটি বাদ দিলেও হিজাব ও পর্দার অনেক উপকারী দিক রয়েছে। বাইরে বের হলে ত্বক ও চুলের সব থেকে বড় শত্রু হল ধুলাবালি ও ক্ষতিকর সূর্যকিরণ। অথচ ত্বক ও চুল রক্ষার একটি ভালো উপায় হচ্ছে হিজাব ও বোরকা। অন্যদিকে শুধু বোরকার সাথে নয়, হিজাব পরা যায় শাড়ি, কামিজ, কুর্তা বা অন্য যে কোনো পোশাকের সাথেও। এখানেই শেষ নয়। আজকাল অনেক বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে হিজাব পরে উপস্থিত হতে দেখা যায়। পর্দার পাশাপাশি নিজেকে ফ্যাশনেবল একটি লুক দেয়ার পাশাপাশি নারীরা আজ নিজেকে মার্জিত আর অনেকটাই আলাদা করতে হিজাবে বেশি ঝুঁকছেন।


ঢাকায় হিজাবের সবচেয়ে বড় মার্কেট হচ্ছে বসুন্ধরা সিটির লেভেল ফোর। এই ফ্লোরে প্রায় দেড়শো দোকান রয়েছে হিজাব ও বোরকার। শুধুমাত্র হিজাব বিক্রি করে এমন দোকানও অনেক রয়েছে। মার্কেটের নিচতলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলো হিজাব ও বোরকার দোকান। এছাড়াও ঢাকার প্রতিটি মার্কেট ও শপিং প্লাজায় রয়েছে হিজাব ও বোরকার দোকান। সময়টা এখন ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, তাই বোরকাও আর আগের মতো নেই। গাউন, ওভারকোট ও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের বোরকা পাওয়া যায় বাজারে। রয়েছে প্রায় ৪-৫ ধরনের হাজারো রঙের হিজাব। মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত ঢেকে রাখে মাদানী হিজাব। সাধারণত হজ্বের সময় এই হিজাব পরেন নারীরা। নামাজের সময়ও এই হিজাব ব্যবহার করা যায়। মাদানী হিজাবের চেয়ে একটু ছোট হিজাবকে কুচি হিজাব বলে। এই হিজাব দিয়ে গলা ও বুক ঢেকে রাখা যায় খুব সহজেই।



কিন্তু ফ্যাশনেবল তরুণীরা হিজাবকে আরো ছোট ও সহজে পরার জন্য বেছে নেন শর্ট হিজাব বা ফিক্সড হিজাব। এতে পিনের কোনো ঝামেলা নেই। অবশ্য এ হিজাবের উপর ওড়নাও পরেন অনেকে। ওড়না হিজাবও বেশ জনপ্রিয়। ওড়নার মাঝখানে একটি ক্যাপ যুক্ত থাকে, সেটি মাথায় পরে নিলেই সম্পন্ন হয় হিজাব পরা। তবে ওড়নাটি পেঁচিয়ে পিন দিয়ে আটকে রাখতে হয়। এই হিজাবের প্রচলনই এখন সবচেয়ে বেশি। হিজাবের পাশাপাশি অনেক তরুণী পিন দিয়ে আটকে স্কার্ফ ব্যবহার করেন। আর পার্টি, অনুষ্ঠান কিংবা বিশেষ দিনে পোশাকের রঙের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে হিজাব পরাও বেশ জনপ্রিয়।


বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বোরকা ও হিজাব পরিধান করছে। এর মধ্যে গ্রামীণ নারীদের প্রায় ৫০ শতাংশ পোশাকটি পরছেন। শহুরে নারীদের মধ্যে এ হার কিছুটা কম। তবে তা ৩০ শতাংশের নিচে নয়। অঞ্চলভেদেও হিজাব ও বোরকা পরার প্রবণতায় তারতম্য রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ নারীই বোরকা বা হিজাব পরিধান করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশেষ কিছু জেলা, যেমন নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনীতে ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৮০ শতাংশ নারীই বোরকা ও হিজাব পরেন।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশে নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ৯৩ লাখ। এর মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি।


বিবিএসের এ পরিসংখ্যান ও গবেষণার তথ্য বিবেচনায় দেশে বোরকা ও হিজাব ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখের মতো। এ পোশাক বাবদ একজন নারী বছরে গড়ে এক হাজার টাকা ব্যয় করলেও দেশে বোরকা ও হিজাবের বাজার দাঁড়ায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।


অনলাইন শপগুলোরও চাহিদাসম্পন্ন পোশাকের তালিকায় রয়েছে হিজাব ও বোরকা। বর্তমানে দেশে শতাধিক ই-কমার্স সাইট রয়েছে। কিছু পোর্টাল রয়েছে, যেগুলোয় শুধু হিজাব ও বোরকা বিক্রি হয়। এছাড়া ফেসবুকভিত্তিক (এফ-কমার্স) সাইটও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— হিজাব আইকন, হিজাব শপ, আহাম হিজাব কালেকশন ও হিজাব হাউজ। ই-কমার্স সাইটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— আজকের ডিল, আবায়া ক্লদিং, সিনবাদ ডটকম ও ডিঅ্যান্ডজি।


দেশে হিজাব ও বোরকা বিক্রয়কারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ‘ইরানী বোরকা বাজার’। ২০০৭ সালের দিকে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে মাত্র দুটি দোকান দিয়ে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি। নয় বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শাখা দাঁড়িয়েছে ২৮টি। ঢাকার বাইরেও নিজস্ব শাখা খুলে হিজাব ও বোরকা বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।


ইরানী বোরকা বাজার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশে হিজাব-বোরকার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে কম বয়সী নারীদের মধ্যে হিজাব-বোরকা এখন ফ্যাশনেবল পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় আমরা নতুন শাখা খুলেছি। ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত নতুন ডিজাইনের হিজাব-বোরকাও বাজারে আনছি।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. সানজীদা আখতার বলেন, বর্তমানে পোশাকের বাজারে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও আধুনিক ফ্যাশনের মধ্যে একটি সংযোগ ঘটানো হয়েছে। হিজাব ও বোরকা পরিধানকারী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের নারীরা ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় পর্দার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পাশাপাশি আধুনিক ফ্যাশনও পছন্দ করে। বর্তমান সময়কার বাজারে হিজাব ও বোরকার ডিজাইনে আধুনিক ফ্যাশনের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।


বাংলাদেশী নারী, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে হিজাব ও বোরকার প্রতি ঝোঁকের বিষয়টি উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক বাংলাদেশী ফাতেমা মোহসিনা ইসলাম গবেষণা করেছেন বাংলাদেশী তরুণীদের ইসলামী ফ্যাশন ও পোশাক নিয়ে। ‘আ কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক অন দ্য স্টাডি অব ট্রেন্ডস অব ইসলামিক ফ্যাশন অ্যান্ড ক্লদিং প্র্যাকটিসেস অ্যামোংস্ট ইয়াং মুসলিম ফিমেল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, ৫৬ শতাংশ তরুণীই ইসলামী পোশাক পরিধান করেন।


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সৌদি, দুবাই ও জর্ডান থেকে হিজাব ও বোরকা আমদানির পর স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পোশাকটি আমদানি করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীন থেকেও। চাহিদা বাড়ায় এখন স্থানীয়ভাবেও অনেকেই বোরকা তৈরি করছেন। একেকটি বোরকা সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com