শিরোনাম
উৎপাদনে যেতে শুধু বিদ্যুতের অপেক্ষায় সিসিসি
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৪৬
উৎপাদনে যেতে শুধু বিদ্যুতের অপেক্ষায় সিসিসি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে ক্ষমতাসীন সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একশ চৌদ্দ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা হলেও কেবলমাত্র বিদ্যুতের অভাবে দেশে মূল্যবান কেমিক্যাল তৈরির একমাত্র রাষ্ট্রীয় কারখানা চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (সিসিসি) উৎপাদন যেতে পারছে না। জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ এটি ছিল সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান।


অথচ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর সবকিছু গুছানো হলেও কেবলমাত্র বিদ্যুতের অভাবে কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।


বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের প্রয়োজনীয় কেমিক্যালের চাহিদা মেটানোর জন্য ১৯৬৫ সালে শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ডিডিটি ফ্যাক্টরি এবং কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ অব পাকিস্তান লিমিটেড নামের দুটি কারখানা নির্মাণ করা হয়। ৯১ দশমিক ১৯ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত কারখানা দইটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয়করণ করা হয়। রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও পরিচালনার সুবিধার্থে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এক করে নামকরণ করা হয় চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স বা সিসিসি। এখানে কস্টিক সোডা, তরল ক্লোরিন ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড দেশের স্টিল মিল, স্টিল রি-রোলিং মিল, পেপার মিল, সার কারখানা এবং পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কেমিক্যালের যোগান দিয়ে আসছিল। দীর্ঘ সাতত্রিশ বছর ধরে কারখানাটি লাভজনকভাবে চলে আসছিল।


২০০২ সালে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। লাভজনক থাকার পরও চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স (সিসিসি) কেন বন্ধ করে দেয়া হলো তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। শ্রমিক কর্মচারীরা কারখানাটি চালু করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানা আন্দোলন সংগ্রাম করলেও কারখানাটি চালু করা সম্ভব হয়নি।


চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে কারখানাটিকে উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হলেও গ্যাস সংযোগের অভাবে বহুদিন ঝুলে থাকে সবকিছু। পরবর্তীতে গ্যাস সংযোগ পাওয়া গেলেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অভাবে আবারো সবকিছু ঝুলে গেছে।


চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ১৯৯৬ সালে বিএমআরই করা হয়। ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানি একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কারখানাটির আধুনিকায়ন ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে। এর পর কারখানাটির উৎপাদনও বাড়তে থাকে। কিন্তু ১৩০ কোটি টাকা খরচ করার ছয় বছরের মাথায় রহস্যজনক কারণে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয় ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ওই সময় কারখানার পাঁচ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর সাথে শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী আন্দোলন সংগ্রাম করলেও কারখানাটি চালু করা সম্ভব হয়নি। পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।


আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় কারখানাটি বন্ধ করার নয় বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল নতুন করে চালু করার জন্য উদ্বোধন করা হয়। নতুন করে বিভিন্ন পদে ৩৯ জনকে নিয়োগও দেয়া হয়। কারখানাটি চালু করার জন্য চার দফা টেন্ডার আহবান করা হয়। কারখানা চালুর জন্য ওই বছরই চার দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু তাতে কোন সাড়া না পাওয়ায় পঞ্চম দফায় দরপত্র আহবান করা হয়। এতে ভারত ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। পঞ্চম দফার আন্তর্জাতিক দরপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ১১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় চীনের ওয়াং এনিয়ং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।


২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে চীনা প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি করে সরকার। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু বিদেশী প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তিতে ছিল পরবর্তী ১৪ মাসের মধ্যে কারখানাটি উৎপাদন উপযোগী করে দেয়া হবে। কিন্তু সময়মতো যন্ত্রপাতি আমদানি না হওয়ায় দফায় দফায় সময় পেছাতে থাকে।


২০১৫ সালের শেষ দিকে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কারখানাটি চালুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে তাদের পক্ষে কারখানাটি চালু করে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এবার নতুন করে সংকট তৈরি হয় বিদ্যুৎ নিয়ে।


কারখানার পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০২ সালে আমাদের কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার সময় এতে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। যেটি পরবর্তীতে পিএইচপি কোম্পানিকে দিয়ে দেয়া হয়। এখন নতুন করে কারখানা চালু করতে গিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সংস্থান হচ্ছে না। পিএইচপির সাথে শেয়ার করে লাইন চালু করতে গেলেই ট্রিপ করছে। প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অভাবে সবকিছু গুছিয়েও কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুতের অভাবে চীনা প্রতিষ্ঠানটি কারখানাটিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে আমাদেরকে বুঝিয়েও দিতে পারছে না। এতে করে তারাও ঝুলে রয়েছে। ১১৪ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে কারখানার সবকিছু ঠিকঠাক করা হলেও গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে রয়েছে।


পিডিবির পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক দিন কারখানাটি বন্ধ ছিল। এতে করে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা নিরসন করার চেষ্টা করছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে সিসিসির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের যোগান দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com