শিরোনাম
ব্যবসায়িক কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম
প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৭, ১৪:১১
ব্যবসায়িক কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম
তৌফিক ওরিন
প্রিন্ট অ-অ+

কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে রাজধানীসহ পুরো দেশের চালের বাজারে। সর্বশেষ গত ১৫ দিনে রাজধানীতে চালের দাম কেজিতে দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে দফায় দফায় এই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।


শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারের পাইকারি এবং খুচরা চালের দোকান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের বাজার বেশ চড়া।


প্রতিনিয়ত দাম বৃদ্ধির কারণে চালের বাজারের অস্থিরতার বিষয়টি স্বীকার করছেন খুচরা, পাইকারীসহ সকল স্তরের চাল বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছেন। খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন, অতি বৃষ্টি ও হাওর এলাকায় বন্যার কারণ দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে মিল মালিকরা। মূলত অধিক মুনাফার আশায় তারা কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ তাদের।


রাজধানীর বাজারে ১৫ দিন আগে যেখানে এক কেজি প্রথম শ্রেণীর মিনিকেট চালের দাম ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, আজকে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। নাজির চালের দামও বেড়েছে পাঁচ, ছয় টাকার মতো। নাজির বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে। ৪০ টাকার কেজি স্বর্ণা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। ইরি-২৮ প্রতি কেজি ৩৮, ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।


কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ মণ্ডল বিবার্তাকে বলেন, যে দিনই চাল কিনতে আসি দাম আগের থেকে বেশি। এভাবে চলতে থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা হাওর এলাকার বন্যাকে পুঁজি করে দাম বৃদ্ধি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।


রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা বিসমিল্লাহ রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ারের হাজী মোনতাসির বিল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, আমরা মুলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চাল আমদানি করি। কিন্তু এবার হাওর এলাকায় বন্যার কারণে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী আগের মত চাল দিতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন মিল মালিকরা।


তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাওরান বাজারের কয়েকজন বিক্রেতা বলেছেন, দিনাজপুরের পাইকারি চাল বিক্রেতারা প্রচুর পরিমাণে চাল মজুত করে রেখেছেন। মুলত চালের দাম বৃদ্ধি বা চালের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃত্রিমভাবে চালের সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন। আমরা ১০০ বস্তা চাল কিনতে গেলে চালের সংকটের কথা বলে দেয়া হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ বস্তা চাল।


দাম বাড়ার বিষয়ে দিনাজপুরের শাহান শাহ রাইস মিলের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন বিবার্তাকে মুঠোফোনে বলেন, গত বছর এই সময়ে আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ইরি আটাশ ধান কিনেছি প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায়। কিন্তু এ বছর সেখানে হাজারের উপরে ধান কিনতে হচ্ছে। আমরা তো আর লস করে চাল বিক্রি করতে পারি না।


তবে চাল মজুত করে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মজুদ করা হচ্ছে এই ধারণাটি ঠিক নয়। হাওর এলাকার বন্যার কারণে ধানের একটি বড় উৎস থেকে এ বছর ধান আসছে না। বরং সেখানেও আমাদের ধান, চাল পাঠাতে হচ্ছে।


এদিকে দাম বাড়ায় চাল আমদানিতে সাময়িকভাবে শুল্ক তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। কারণ চলতি অর্থবছরে চাল আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় চাল আমদানি কমে গেছে। ছয় বছর পর সরকার ছয় লাখ টন চাল আমদানির চিন্তাভাবনা করছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।


এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির জন্য চালের দাম বেড়েছে। কারসাজি এড়াতে রোজার আগে চালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, হাওরে অকাল বন্যায় ও ব্লাস্ট রোগে এবার ১৫ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছে, যা চালের হিসেবে ১০ থেকে ১২ লাখ টন। তবে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। এছাড়া বর্তমানে সরকারের গুদামে সাড়ে পাঁচ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। তাই দেশে বছরে প্রায় তিন কোটি টন চালের চাহিদা মেটাতে কোনো সমস্যা হবে না।


বিবার্তা/ওরিন/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com