শিরোনাম
ব্যাংকের ঘাটতি পূরণে আবারও করের অর্থ!
প্রকাশ : ১৬ মে ২০১৭, ২০:০৩
ব্যাংকের ঘাটতি পূরণে আবারও করের অর্থ!
ছবি : প্রতীকী
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে জনগণের করের অর্থ থেকে আবারও বরাদ্দ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে রাখা হচ্ছে ২,০০০ কোটি টাকার তহবিল। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটেও এ খাতে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। তবে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১,৭০০ কোটি টাকা।


করের অর্থ দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটানোর সিদ্ধান্তে বিতর্ক উঠলেও ওই বৃত্ত ভাঙ্গতে পারছে না সরকার। জবাবদিহিতা ছাড়াই প্রতিবছরই দেয়া হচ্ছে বরাদ্দ। তবে কয়েক বছরে বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে অর্থবিভাগ।


২০১৫-১৬ অর্থবছরে এইখাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৫,০০০ কোটি টাকা। তবে ওই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে বরাদ্দের পরিমাণ রাখা হয় ১,৮০০ কোটি টাকা।


অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি বাবদ সরকার যোগান দেয় ১,২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ১৪০ কোটি ৮ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে যোগান দেয়া হয় ৫৫ কোটি টাকা।


২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংক পায় ১,১৯০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক ৭১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২৫০ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে সরকার যোগান দেয় ৭৫ কোটি টাকা।


২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ব্যাংকগুলোকে বড় অংকের অর্থ মূলধনবাবদ যোগান দেয়। দেখাযায়, ওই বছর রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক পায় ১,৯৯৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ৮১৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১,০৮১ কোটি, রূপালী ব্যাংক ২১০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১৭৫ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে মূলধন বাবদ সরকার যোগান দেয় ৮০ কোটি টাকা।


ঘাটতি পূরণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক পায় ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১১৯ কোটি ৪৯ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককের জন্য দেয়া হয় ১০৮ কোটি টাকা।


২০১১-১২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয় ৮৩ কোটি এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জন্য ছাড় করা হয় ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।


রাষ্ট্রীয় মালিকানার সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ২০১২ সালে হলমার্ক ও তার পাঁচ সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেডসহ মোট ৩,৪৬৮ কোটি টাকা আত্মসাত করে। বিপুল পরিমাণের এই ঘাটতিতে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকের নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ায় সরকার প্রতিবছরই জনগণের করের টাকায় মূলধন সহযোগিতা করে আসছে।


২০০৮ সাল পর্যন্ত ভালো হিসেবে স্বীকৃত ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। আর ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংকেই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এরপরই ব্যাংকটি ২,৬৮৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। যদিও আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে গত তিন বছরে বেসিক ব্যাংককে ২,৩৯০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়েছে সরকার।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিবার্তাকে বলেন, সরকারের যেহেতু রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মালিক, সেহেতু ঘাটতি পূরণে অর্থ যোগান দেয়া নৈতিক ব্যাপার। কিন্তু আবার এভাবে বছরের পর বছর মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ যোগান দেয়া একদিকে অনৈতিক। কারণ, সমস্যা মূলধন ঘাটতি নয়, সমস্যা হলো ব্যাংকে নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। তাই ব্যাংক পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা না আনলে সমস্যা হতেই থাকবে। ফলে সেখানে আগে হাত দেয়া দরকার। আর মূলধনঘাটতির ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে বলা দরকার, সরকার নতুন করে অর্থ দেবে না। ব্যাংকগুলোকে ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করে তা পূরণ করতে হবে।


সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জবাবদিহিতা ছাড়াই ব্যাংকগুলোকে অর্থ যোগান দেয়া অযৌক্তিক। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে মূলধনসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর অর্থ কেন সরকার দেবে?


তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকের সংখ্যাই কমিয়ে আনা দরকার। যেহেতু ব্যাংকগুলো টিকতে পারছে না, তাই তাদের বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com