শিরোনাম
পাহাড়ে অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ছে কমলা-মাল্টা
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১০:২২
পাহাড়ে অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ছে কমলা-মাল্টা
নুরুল করিম আরমান, লামা
প্রিন্ট অ-অ+

পার্বত্য জেলাগুলোতে কমলা ও মাল্টা চাষ অর্থনীতির নতুন বুনিয়াদ গড়ছে। আর্থিক স্বচ্ছলতার অপার সম্ভাবনা দেখে পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও কমলা ও মাল্টা চাষে ঝুঁকছে। তবে পচনশীল এই ফল দুটির যথাযথ সংরক্ষণাগার না থাকায় আর্থিক ঝুঁকিতেও আছেন চাষীরা।


কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাহাড়ে কমলা ও মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। একসময় এখানের পাহাড়গুলোতে ফলদ, বনজ গাছের বাগান ও জুমের ব্যাপক আবাদ হত। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে কমলা ও মাল্টার অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে এটি। এখানের অধিকাংশ পাহাড় এখন কমলা ও মাল্টায় ভরে উঠেছে। সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে এখানে উৎপাদিত এসব রসালো ফল।


তারা আরো জানায়, এখানের কমলা-মাল্টা স্বাদ ও আকারের দিক থেকে বিদেশ থেকে আমদানি করা কমলার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আবার লাভের মুখ দেখায় চাষীরা কমলা ও মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন।


দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ৬শ’ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি ছিল পার্বত্যাঞ্চলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ। প্রকল্পে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে ৬শ’ পরিবারের মাঝে ৪৫০টি কমলা, ৯০০টি কফির চারা, ৪৫০টি পেঁপে, ১৫শ’টি কলা এবং তিন হাজার আনারস চারা বিতরণ করা হয়।


কৃষি বিভাগের মতে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার ইডেন পাড়া, মুন্নম পাড়া, বেথেল পাড়া, এথেল পাড়া, বগালেক পাড়া, কৈক্ষ্যংঝিড়ি, পাইন্দু, রনিন পাড়া মুরংগ পাড়া, শঙ্খমনি পাড়া, থানচি উপজেলার এ্যাম্পু পাড়া, কুনাং পাড়া, জিনিংঅং পাড়া, মঙ্গী পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া, গালেঙ্গ্যা, ঘেরাও, দোলিয়াম পাড়া, পোড়া পাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী, রুপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়ন, আলীকদম উপজেলার লাংদি মুরুং পাড়া, কলারঝিরি, কাইন্দালা ঝিরি পাড়া এবং জেলা সদরের স্যারন পাড়া ও লাইলুনপি পাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে সাড়ে তিন শতাধিকেরও বেশি কমলা ও মাল্টা বাগান। চলতি বছর জেলায় প্রায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে কমলা উৎপাদন হয়েছে।




বান্দরবানের রনিন পাড়ার কমলা চাষী যায়াল বম ও গ্যালেঙ্গা পাড়ার মেনরুং ম্রো বলেন, জুম চাষের পরিবর্তে পাহাড়ে কমলা আর মাল্টা চাষ বাড়ছে। অন্যবারের তুলনায় এবার কমলা আর মাল্টা ফলের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তাই আশানুরুপ দাম পাচ্ছে না চাষীরা। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বাজারে নিয়ে কমলা বিক্রি করতেও পারছেন না। তাই কম দামে বাগান বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।


আমতলী পাড়ার নিমথুই মারমা ও বটতলী পাড়ার মেলাং মারমা বলেন, ‘ছোট ছোট গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা আর মাল্টা। গাঢ় সবুজ রঙের কমলা, মাল্টাগুলোর কোনো কোনোটিতে হলুদাভ রং এসেছে। প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৫০টি ফল ধরেছে। কোনো কোনো গাছে তারও বেশি। ৬০ হাজার করে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় দুটি কমলা বাগান বিক্রি করেছি।’


বান্দরবান বাজারের ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রুমা এবং থানছি উপজেলা থেকে কমলা কিনে এনে বাজারে বিক্রি করি। ছোট কমলা জোড়া ২০ টাকা এবং বড় সাইজের জোড়া ৩০ টাকায়। এখানকার উৎপাদিত কমলা আর মাল্টা খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদা আছে।’


এদিকে লামা উপজেলার গজালিয়া লেবু পালং মৌজার চিন্তাবর পাড়ার কমলাচাষী সোচিং মুরুং জানান, তিনি তিন একর জমিতে কমলা চাষ করেছেন। প্রথম বছর একর প্রতি বীজ সংগ্রহ, চারা পলিব্যাগ করা, জায়গা পরিষ্কার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫-৬ বছর পর একে একে কমলা ধরা শুরু করে।


আলীকদম উপজেলার লাংদি মুরুং পাড়া কারবারী ও কমলাচাষী লাংদি মুরুং বলেন, ‘আগে পাহাড়ে জুম চাষ করতাম। ৫-৬ বছর আগে অন্যদের দেখাদেখি এবং লাভের কারণে কমলা চাষ শুরু করি। দুই একর পাহাড়ে কমলা আবাদ করি। কমলা বিক্রি করে খরচ বাদে বছরে দুই লাখ টাকার বেশি মুনাফা পেয়েছি।’


একই এলাকার কলারঝিরি, কাইন্দালা ঝিরির কমলাচাষীরা কমলা আবাদ করে ভালোই আছেন বলে জানান।


কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ পাল বলেন, কমলার ভালো ফলন হয়েছে এবার জেলায়। মাল্টাও খারাপ হয়নি।


থানচি সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো বলেন, বাজারে প্রতিটি কমলা ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফড়িয়ারা দুর্গম রুমা ও থানছি থেকে একশ কমলা কিনছে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, ব্যবসায়ীরা রঙ আসার আগেই ছোট কমলা বাজারে বিক্রি করছে। ফলে উৎপাদিত কমলার স্বাদ অনেক কমে যাচ্ছে এবং খেতেও টক লাগছে। তবে কমলাসহ মৌসুমী ফল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ টাকার কমলা বাগানেই পচে যাচ্ছে।


বিবার্তা/আরমান/নিশি/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com