শিরোনাম
খেলাপিঋণ সবচেয়ে বেশি শিল্পখাতে
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:০৬
খেলাপিঋণ সবচেয়ে বেশি শিল্পখাতে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি খেলাপিঋণ রয়েছে শিল্পখাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৫৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে নয় হাজার কোটি টাকাই শিল্প খাতে (বৃহৎ, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প), যা মোট খেলাপি ঋণের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, খেলাপিঋণ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে আমরা খাতভিত্তিক খেলাপিঋণের পরিসংখ্যান ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। ব্যাংক যদি যেকোনো ঋণে তদারকি বাড়ায় এবং ঋণঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রদান করে, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হিসাবে শিল্পখাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৮৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে ঋণের পরিমাণ ৭৫ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে সাত হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।


ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ আট হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৫২২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ২ দশমিক ৯ শতাংশ।


ব্যাংকগুলোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপিঋণ রয়েছে বাণিজ্যিক খাতে। গত ডিসেম্বরভিত্তিক হিসাবে এ খাতে খেলাপিঋণের পরিমাণ আট হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর এ খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণ এক লাখ ২১৭ কোটি টাকা।



শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতের খেলাপিঋণ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ বলেন, ঋণ দেয়ার সময় কাকে দিচ্ছে, সে ঋণ পরিশোধ হবে কিনা, এগুলো পর্যালোচনা করতে চায় না ব্যাংকগুলো। ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ দেয়ার সময় ভুলে যান, তার হাতের টাকাটা জনগণের। সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যাংকের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য। খেলাপিঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর হতে হবে। যে ব্যাংকের খেলাপি বাড়বে, সে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এনে জবাবদিহি করাতে হবে।


দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাত থেকে। এ খাতে ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণের পরিমাণ ছয় হাজার ১০৩ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হিসাবে কৃষিতে খেলাপিঋণের পরিমাণ চার হাজার ছয় কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মোট খেলাপি ঋণের যা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।


কৃষিতে খেলাপির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কৃষিঋণ সাধারণত দেশের প্রান্তিক জনগণ নেয়। ঋণ নিয়ে কৃষকরা চাষাবাদে ব্যবহার করে। অনেক সময়ই বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে কৃষকরা ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারেন না। তবে অধিকাংশ কৃষক হাতে টাকা এলে ঋণ পরিশোধ করে দেন। সে হিসাবে কৃষির জন্য এ পরিমাণ খেলাপি ঋণ বড় কোনো অঙ্ক নয়। তারপরও কিছু ঋণ অনাদায়ী থেকে যায়। সেটিকে আমরা কৃষির জন্য ভর্তুকি হিসেবে দেখতে পারি।


প্রতিবেদন মতে, খেলাপিঋণের পরিমাণের দিক থেকে উপরের দিকে রয়েছে চলতি মূলধনি খাত। এ খাতে (বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প) সর্বমোট ঋণের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ সাত হাজার ২৬ কোটি টাকা।


রফতানি খাতে সর্বমোট ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে খাতটিতে বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৩ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। আর মোট খেলাপি ঋণের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আমদানি খাতে (ইমপোর্ট ক্রেডিট ও এলটিআর) বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫৮ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি চার হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।


ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজভাঙা শিল্পে সর্বমোট ঋণের পরিমাণ নয় হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিঋণের পরিমাণ ৯০৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ১ দশমিক ৮ শতাংশ।


পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ঋণ ১১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এছাড়া ভোক্তাখাতে খেলাপিঋণের পরিমাণ এক হাজার ৫৫৮ কোটি ও আবাসন খাতে (কনস্ট্রাকশন, হাউজিং ও অন্যান্য) দুই হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com