শিরোনাম
রপ্তানি আয়ে পোশাক নির্ভরতা কাটার লক্ষণ নেই
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৫৮
রপ্তানি আয়ে পোশাক নির্ভরতা কাটার লক্ষণ নেই
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রপ্তানি বাণিজ্যে লেনদেনের ভারসাম্য অনুকূলে রাখার অন্যতম শর্ত হচ্ছে পণ্যের বহুমুখিকরণ। সোজা কথায় এক পণ্যের উপর নির্ভরতা কাটাতে বিকল্প পণ্যকেও তুলে আনতে হয়। রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্যের বৈচিত্র এ কারণে জরুরি বিবেচিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রপ্তানির বাণিজ্যের আয় তৈরিপোশাক নির্ভর। আর এ নির্ভরতা সহজে কাটিয়ে ওঠার লক্ষণ এখনও সুস্পষ্ট নয়।


স্বাভাবিক নিয়মে জুলাই–আগস্টেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেশি হয়েছে। সে জন্য দেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতেও চাঙাভাব। অথচ তৈরি পোশাক রপ্তানি কম হলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধসে পড়ে। গত জুলাই ও আগস্ট—এ দুই মাসে এমন বিপরীতমুখী চিত্রই দেখা গেছে।


চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ঈদুল ফিতরের জন্য অধিকাংশ পোশাক কারখানাতেই ১০ দিনের মতো উৎপাদন বন্ধ ছিল। ফলে পোশাক রপ্তানি হয়েছে কম, মাত্র ২১১ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। পোশাক খাতের অতিনির্ভরতার কারণে মোট পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শেষ পর্যন্ত ঋণাত্মক হয়ে যায়, ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অবশ্য আগস্ট মাসেই পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।


চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৮৩ কোটি মার্কিন ডলার। এই আয়ের ৮৩ শতাংশ বা ৪৮৪ কোটি ডলার তৈরি পোশাকখাত থেকে এসেছে। পোশাকখাতের এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৪৪৮ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি মোট পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।


তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘পণ্য রপ্তানিতে পোশাক খাতের ওপর অতিনির্ভরশীলতা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কখনো পোশাক রপ্তানি কমলে পুরো অর্থনীতিই বিপদে পড়বে। তাই রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজারে যাওয়া দরকার।’


ব্যবসায়ী নেতারা বহুদিন ধরেই এই কথা বলছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না কেন— এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘আমাদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে যে ব্যবসা বেশি চলে, সেদিকেই সবাই ঝোঁকেন। নতুন কিছুতে আমরা যেতে চাই না। ঝুঁকি নিতে চাই না।’



তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ব্যবসায়ীদের নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, পোশাকখাতে সম্ভাবনা ছিল বলেই সরকার নীতি সহায়তা দিয়েছে। একই রকম চামড়া, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর সম্ভাবনা আছে।’


রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সম্প্রতি রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২১ কোটি ডলার। তার মানে রপ্তানি হয়েছে ৬ শতাংশ কম বা ৫৮৩ কোটি ডলার।


ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, পোশাকের পর সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এই আয় ১৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ১৪ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য, ১০ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৯ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য, ৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ, দেড় কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।


এদিকে গত জুলাইয়ে ২৫৩ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছিল। পরের মাস অর্থাৎ আগস্টে এসে ৩৩০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের আগস্টের ২৭৫ কোটি ডলারের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছর তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।


ব্যবসায়ী নেতারা রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিকরণে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com